শুধুই নয় গান, অঞ্জন দত্তের বেলা বোসের নামে কলকাতার কাছেই আছে একটা আস্ত এক স্টেশন
‘এটা কি ২৪৪১১৩৯? দিন না ডেকে বেলা কে একটি বার!’ এই লাইনটা কিশোর বয়সে শোনেনি এমন ছেলে পাওয়া বড়ই মুশকিল। কারণ বাঙালি হয়ে অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত এই গানটি কোনোদিন তা কি আবার হতে পারে নাকি। বিখ্যাত এই গানের কয়েকটা লাইনে যেন হাজারো ছেলের প্রেমকাহিনীর চিত্র ফুটে উঠেছে। সাধের প্রেয়সীকে পাবার আশায় পড়াশোনা শেষ করেই চাকরির খোঁজ। সেই প্রসঙ্গে তৈরী হয়েছিল অঞ্জন দত্তের বেলাবোস গান। কিন্তু দশক পেরিয়েও সেই গানের রেশ রয়েছে আজও।
বেলা বোস গানটি রিলিজ হবার পরেই ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। ১৯৯৪ সালে রিলিজ হয়েছিল গানটি যা ২০২১ এ দাঁড়িয়েও প্রায় সমান জনপ্রিয়। কিন্তু যার নামে তৈরী হল এই বিখ্যাত গান সেই বেলা বস কি সত্যি? অনেকেই তো বাস্তব জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই গান লেখেন। যদি তাই হয় তাহলে সত্যিই কোথাও আছে অঞ্জন দত্তের বেলা বোস। যদিও এর উত্তর আজ অধরা। আসলে যে সময়ে গানটি তৈরী হয়েছিল সেই সময় স্মার্টফোন তো দূর মোবাইলের প্রচলনও খুব একটা হয়নি। রাস্তায় থাকা টেলিফোন বুথ দিয়েই কাজ চলে যেত।
রাস্তার ধারে থাকা এই টেলিফোন বুথ থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত। বিখ্যাত সেই গানের বেলা বোস থেকে ২৪৪১১৩৯ এখনো অনেকের মুখস্ত। তবে বেলা কি সত্যিই ছিল? এর উত্তর কিছুটা জটিল তবে রয়েছে বটে। এমনকি বেলা বোসের নামেই রয়েছে আস্ত একটা স্টেশন। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে কে এই বেলা বোস? তিনি হলেন আসলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বেলা বসু। ১৯২০তে অবিভক্ত ২৪ পরগণায় জন্ম হয়েছিল তাঁর। সুভাষ চান্দ্রা বসুর সেজদা সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে বেলা বসু। ১৯৪০ সালে যোগ দিয়েছিলেন সক্রিয় আন্দলনে, বিপ্লবীদের গোপন ডেরায় পাঠানো থেকে পালতে সাহায্য করত বেলা।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবীদের অনেক সহায়তা করেছিলেন বেলা বসু। স্বাধীনতার পরেও উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন বেলা বসু। তবে আন্দোলন থেকে শুরু করে পুনর্বাসনের কাজের চাপে শরীর একেবারেই ভেঙে পরে। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই প্রয়াত হন বেলা বসু। বেলা বসুর মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া-বর্ধমান রেললাইনের একটি স্টেশনের নামকরণ করা হয়। স্টেশনের নাম রাখা হয় বেলানগর।
বেলা বোস গান নিয়ে আরো একটি মজার তথ্য রয়েছে। ৯৪তে ৬ সংখ্যার নাম্বার হত, তাই ঝামেলা এড়াতে ৭ সংখ্যার নাম্বার নিয়েই লেখা হয় গান। এরপর যখন গান রিলিজ হয় তখন রীতিমত লোকের মুখে মুখে চলে আসে ২৪৪১১৩৯। কিছুদিনের মধ্যেই টেলিফোনের ব্যাপক চাহিদার কারণে নাম্বার বেড়ে হয় ৭ সংখ্যার তারপর অস্তিত্বের খোঁজ মেলে বেলা বসের নাম্বারের। যদিও সেটা আসল বেলা বোস নোই বরং এক সংবাদ পত্রের অফিসের নাম্বার ছিল। তবুও রোজ শয়ে শয়ে মানুষ ফোন করতেন বেলা বসের খোঁজে।