‘মোকামকাই’! এক ব্রিটিশ নাগরিকের মানুষের কাটা মাথা জমা করার আজব শখ

মানুষের কত ধরনের জিনিস সংরক্ষণ করার শখ থাকে। কেউ ডাক টিকিট সংগ্রহ করে,কেউ আবার প্রজাপতি জালে ধরে তা সংগ্রহ করে। কিন্তু আজ থেকে ১৫০ বছর আগে এমন একজন ছিলেন যার শখ ছিল মানুষের মাথা সংগ্রহ করা। আর এই শখের পেছনে কোনো বিকৃত উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল নৃতাত্বিক সংরক্ষণের এক আশ্চর্য উদ্দেশ্য। ১৮০০ শতকে ব্রিটিশ মেজর গর্ডন রবলে বলে একজন অস্ট্রেলিয়ার মাওরি উপজাতির মৃত মানুষদের মাথা সংগ্রহের এই কাজটি শুরু করেন। তাঁর সংগ্রহে ছিল মোট ৩৫-৪০ টি মোকাই উপজাতির মাথা।

কিন্তু এমন কি ছিল এই মাওরি উপজাতির মধ্যে যে মেজর গর্ডন এদের মৃত মানুষের মাথা সংগ্রহের কথা ভাবলেন! এর পেছনে রয়েছে বর্তমান যুগেও বহুল প্রচলিত একটি জিনিস যাকে আমরা ট্যাটু বা উল্কি বলে চিনি। আসলে এই মাওরি উপজাতির বৈশিষ্ট ছিল নিজেদের চেহারায় আশ্চর্য সব উল্কি করে রাখা। এতটাই নিখুঁত এবং অদ্ভুত ছিল এই সমস্ত উল্কি যে তা অন্য যে কোনো উপজাতির মধ্যে খুবই বিরল ছিল। তারা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই কাজটি করত। মাওরি দের পরিচয় ও সামাজিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে আলাদা বিভিন্ন রকমের ট্যাটু করতো তারা তাদের মুখে। সারা শরীরে অনেক উপজাতি ট্যাটু করলেও এরম গোটা মুখ জুড়ে উল্কি সত্যিই ছিল বিরল। এই ধরনের উল্কিকে বলা হত মোকো।

১৮৬৪ সাল নাগাদ মেজর গর্ডন রবলে কর্মসূত্রে নিউজিল্যান্ডে যান। তখন তা ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। মাওরি উপজাতির এই সকল অদ্ভুত উল্কি দেখে স্বভাবতই তিনি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তিনি ঠিক করেন তার ইউরোপিয়ান বন্ধুদের এই উল্কি তিনি দেখবেন। প্রথমে তিনি মাওরিদের ছবি এঁকে এই উল্কি বাকিদের দেখতেন। কিন্তু ছবি এঁকে আর কতটুকুই বা বোঝানো সম্ভব! তাই তিনি এক সময় মৃত মাওরি দের মাথা কেটে সংগ্ৰহ করা শুরু করলেন।

কিন্তু ওই নিউজিল্যান্ডের জঙ্গলে কিভাবে সংরক্ষণ করবেন মানুষের কাটা মাথা। জানা গেল এর জন্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করেছিলেন তিনি। এক ধরনের বিশেষ জংলী আঠা দিয়ে তিনি মাথাটির ভেতরের অংশ ও বাইরের অংশে প্রলেপ দিয়ে দিতেন। তার আগে অধিক পচনশীল চোখ, জিভ, ঘিলু ইত্যাদি বের করে নিতেন। এভাবেই প্রায় ৩৫-৪০ টি মাওরি দের মোকো যুক্ত মাথা সংগ্রহ করেন তিনি। আর এই কাটা মাথাগুলোকেই ‘মোকামকাই’ বলা হত। তবে গর্ডন রবলের সংগ্রহে থাকা অধিকাংশ মাথাই অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এখনো কিছু মোকামকাই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।




Back to top button