Rabindra Sarbar: ‘দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস’ রবীন্দ্র সরবর, জানেন কি তার ইতিহাস

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: চারিদিকে কলকারখানা,গাড়ি ঘোড়ার শব্দ, বিষাক্ত ধোঁয়ায় জীবনটা যেন যন্ত্রের মতো হয়ে উঠছে। রোজ কার ক্লান্তির মাঝে মানুষ যেন ভুলেই যাচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে। আর এই ক্লান্তি দূর করতে একটু ফুরসৎ মিললেই চলে যাওয়া যায় দক্ষিণ কলকাতার বুকে থাকা একটি ছোট্ট লেক ঢাকুরিয়া লেক -এ। এখন যার নাম বদলে হয়েছে রবীন্দ্র সর
বর ( Rabindra Sarbar )। দেখলে মনে হবে যেন উত্তপ্ত কলকাতার উঠোনে বিদ্ধস্ত প্রাণীগুলির জন্য কেউ যেন দু-বাটি জল দিয়ে রেখেছে। চলুন আজ এই রবীন্দ্র সরোবরের কিছু ইতিহাস জানা যাক।
লোকমুখে এটি “দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস” ( Rabindra Sarbar ) হিসেবে আখ্যায়িত। সকাল হলেই যুগলদের হাতে দায়িত্ব সঁপে দিয়ে পাখিরা চলে যায় নিজের কাজে। আবার সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরে লেকের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দেয় যুগলদের। দক্ষিণ কলকাতায় মল-সংস্কৃতির বাইরে যেটুকু প্রেম তা এই সরোবরকে ঘিরে বা আঁকড়ে থাকা বললে ভুল হবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের দুঃখ, ক্লান্তি, সমস্ত সমস্যা রেখে দিয়ে যান এই জলে। দক্ষিণ কলকাতার এই ফুসফুস শহরের মাঝে থেকেও যেন ভীষণ উদাসীন! নিরিবিলি।
১৯২০-এর দশকের প্রথম দিকে কলকাতা মহানগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি) ১৯২ একর জলাজঙ্গলময় জমি অধিগ্রহণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই অঞ্চলটি বসতিযোগ্য করে তোলা। এর ফলে খননের কাজ শুরু হয় একটি বৃহদাকার হ্রদের। যার নাম দেওয়া হয় ঢাকুরিয়া লেক। এরপর ১৯৫৮ সাল নাগাদ কেআইটির পক্ষ থেকেই এর নাম বদলে কবিগুরুর নামে নাম দেওয়া হয় রবীন্দ্র সরোবর। এই হ্রদকে ঘিরে পরে গড়ে ওঠে শিশু উদ্যান, বাগান, প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদি বিনোদনকেন্দ্র। গড়ে ওঠে নজরুল মঞ্চও।
লেক ও স্টেডিয়ামের মাঝে বসানো হয়েছে রবি ঠাকুরের মূর্তি। সুন্দর এই স্থানে প্রায় একশতাব্দী পুরোনো বেশ কিছু গাছও দেখা যায়। কৃতিম হলেও মূল হ্রদটির আয়তনই প্রায় ৭৩ একর। ২০১২ সালের বৃক্ষ গণনায় এই হ্রদের সীমানার মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটি ভিন্ন প্রজাতির গাছের তথ্য নেওয়া হয়। এছাড়াও হ্রদটির আরও একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে হল এখানে পরিযায়ী পাখিদের যাতায়াত। প্রাতঃভ্রমণ থেকে সূর্যপ্রণাম, বনভোজন থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা, মানুষের যাতায়াতে প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে এই হ্রদ।
আরও পড়ুন – স্বপ্ন হলো সত্যি! সঞ্জয় দত্তের মতো হাভেলি তৈরির স্বপ্ন পূরণ হল সম্রাটের
স্থানীয় লোকমুখে এটিকে ঠাকুরের গ্যালারি ( Rabindra Sarbar ) বলা হয়ে থাকে। এখানে সাম্প্রতিককালের বেশ কিছু পুরস্কারপ্রাপ্ত দুর্গা মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। এই হ্রদের পাশে আছে বেশ কয়েকটি রোয়িং ক্লাবও। তার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব। অন্য সকল কৃত্রিম হ্রদের মতোই ঢাকুরিয়া লেকও ভীষণভাবে দূষণের শিকার হয়েছে গত কয়েক বছরে। প্রকৃতির আশীর্বাদে কলকাতার এই শেষ সম্বলটুকু একদিন শেষ হয়ে যাবে আমাদের অবহেলায়।
আরও পড়ুন – স্বপ্ন হলো সত্যি! সঞ্জয় দত্তের মতো হাভেলি তৈরির স্বপ্ন পূরণ হল সম্রাটের