কেউ যেন জানলা থেকে হাত বাড়িয়ে ডাকে! ‘পুতুল বাড়ি’ নামটি ভয়ের সংক্রমণ ঘটায় শহরবাসী শরীরে

ভূতের বাড়ি তাও আবার এই শহর কলকাতার বুকে। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে তাই না? কিন্তু কলকাতার প্রাচীন ভূতুড়ে পুতুলবাড়ির নাম শোনেননি এমন লোক বোধহয় হাতে গোনা। পুতুল বাড়িকে ঘিরে যে রহস্য দানা বেঁধেছে তা শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন। কিন্তু রহস্যের নেপথ্যে কোন সত্য লুকিয়ে! তা জানেন কি?

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো বাড়িটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে রহস্যময় গা-ছম ছমে অশরীরী হাতছানি। রোমান স্থাপত্যের আদলে তৈরি আহিরীটোলার এই বাড়িটিকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায়। ভেতরে রঙবাহারি কারুকার্য আর হিন্দু দেবদেবীর খোঁদাই করা মূর্তির মধ্যে রয়েছে জীর্ণ ছাপ। সন্ধ্যের পর নাকি এই বাড়িতে দোতলা-তিনতলাতেও লোক উঠতে ভয় পায়। সর্বদা একটা ভয়ের অনুভূতি যেন গ্রাস করতে আসে বাড়িটাকে।

putulbari (1)

শোনা যায়, বহুকাল এই বাড়ির কোনও এক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে খুবই ভালবাসতেন। মেয়ের আবদার মেটাতেই তার বাবা অজস্র পুতুলের মূর্তি তৈরি করান। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে মেয়েটি মারা যায় আর তারপরেই শুরু হয় অশরীরী উপদ্রব। মনে করা হয়, মেয়েটির মৃত্যুর পরেই নাকি তার বিদেহী আত্মা বাড়ির অন্দরমহলে যখন তখন ঘুরে বেড়ায়।রাতে শোনা যায় শিশুর খিল খিল হাসির শব্দ কখনও ডুগরে কেঁদে ওঠে কেউ। রাতের অন্ধকারে পুতুলগুলোয় যেন প্রাণ পায়। তাদের হার হিম করা হাসির শব্দে বাড়িটা যেন হয়ে ওঠে জীবন্ত প্রেতাত্মা।

putulbari

আবার একথাও লোকমুখে শোনা যায়, ইংরেজ আমলে স্বাধীনতা আন্দোলনের বন্দীদের এখানেই গুম ঘরে রাখা হত তারপর দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার করে হত্যা করা হত। সেইসব অতৃপ্ত আত্মারা আজও বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে। তবে কেউ কেউ বলেন, প্রভাবশালী জমিদারদের কুকীর্তির কথা কে না জানে! সেই জমিদার আমলেই বহু নারীকে এই বাড়িতে এনেই শারীরিক অত্যাচার চালানো হতো। সেইসব আত্মারা নাকি রাত হলেই জেগে ওঠে। কখনও ঘুঙুরের শব্দ, কখনও গানের সুর ভেসে আসে কখনও সুতীব্র কান্নার চিৎকারে মুক্তি চায়।

তবে এই বাড়িতে আজও যারা বাস করেন তারা এই কথা মানতে চান না। কারণ ভূতান্বেষীদের উপদ্রব ভূতের চেয়ে বেশি। তাই পুতুল বাড়ির সামনেই টাঙানো ‘ নো এন্ট্রি বোর্ড’। পুরোটাই গুজব বলে উড়িয়ে দেন তারা। বাড়িটি জীর্ণ পুরাতন ও ইতিহাসের বহু নমুনা রয়েছে বলেই বহু মানুষ এটিকে ভূতের বাড়ি মনে করে নানা আজগুবি রটনা করেন। এই বাড়িতে ১৯৯২ সালে ‘সিটি অব জয়’এর শুটিং হয়েছিল। বর্তমানে এটি কলকাতার অন্যতম হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের তকমা পেয়েছে।




Leave a Reply

Back to top button