Dr. Subhas Mukhopadhyay: দড়ির সঙ্গে ঝুলছে মৃতদেহ! হটাৎ কোন রহস্যের আঁধারে নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন সুভাষ মুখার্জি?

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : ১৯৮১ সালের ১৯শে জুন দুপুর বেলায় কলকাতার সারদান অ্যাভিনিউতে পাঁচতলা একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃতদেহ। মৃতদেহের পাশ থেকেই উদ্ধার করা একটি সুইসাইড নোট। সেই নোটে লেখা ছিল, ‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না যে কবে আমার হার্ট অ্যাটাক আসবে আর আমি মারা যাব’। এই ভয়ংকর রাস্তা বেছে নেওয়া ব্যক্তি আর কেউ নন বরং তিনি হলেন, ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবির ( Test tube Baby) জন্মদাতা ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায় ( Dr. Subhas Mukhopadhyay)। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল কী হয়েছিল তাঁর সঙ্গে এমন যার তাঁকে বেছে নিতে হল এই পথ। ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্মদাতা হওয়া সত্ত্বেও নিজের জীবদ্দশায় সেই সম্মান পাননি তিনি। সেই সময় তৎকালীন সরকার দ্বারা তিনি শুধুই পেয়েছিলেন অপমান। মনে করা হয় যার জেরে সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। শোনা যায় যেই ঘরটিতে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন সেই ঘর থেকে নাকি আজও ভেসে আসে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা।
১৯৭৮ সালে ভারতের প্রথম জন্ম হয় টেস্ট টিউব বেবি কানুপ্রিয়া আগরওয়াল ওরফে দুর্গার। ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ( Dr. Subhas Mukhopadhyay) তত্ত্বাবধানে সেই সময় সম্ভব হয় ছিল অসাধ্য সাধন। তাঁর এই অসামান্য আবিষ্কারের মাত্র ৬৭ দিন আগে লন্ডনে জন্ম নিয়েছে বিশ্বের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি। লন্ডনের টেস্ট টিউব বেবির জন্মদাতা ছিলেন ফিজিয়লজিস্ট রবার্ট এডওয়ার্ডস এবং গাইনকলজিস্ট প্যাট্রিক স্টেপটো। আর তাই সমগ্ৰ বিশ্বের কাছে টেস্টটিউব বেবির জন্মদাতা হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নাম। সামান্য কিছু পরিকাঠামো, অর্থের সংকটকে উপেক্ষা করে তাঁর হাতেই জন্ম নেয় ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবি। কিন্তু, তাঁর জীবদ্দশায় এই পদ্ধতি আবিষ্কারের স্বীকৃতি জোটেনি তাঁর।

নিজের জীবদ্দশায় তিনি শুধুই পেয়েছিলেন অপমান আর অবহেলা। তাঁর এই আবিষ্কারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল সেসময়ের পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। আর তাঁর সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গের একদল ডাক্তারও। তাঁর গবেষণা খতিয়ে দেখার জন্য বসানো হয় তদন্ত কমিটির। জানা গিয়েছে, সেই কমিটিতে ছিলেন এমন সব সদস্য ছিল, যাঁদের ফার্টিলিটি বা প্রজনন সম্পর্কে ছিল না কোনও বিশেষ ধারণা। সেই তদন্ত কমিটি ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ( Dr. Subhas Mukhopadhyay) সাফল্যকে দাবি করেন ভুয়ো বলে। এমনকী, জাপানের এক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও যেতে চেয়েছিলেন সেখানে, তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে বক্তব্য রাখার জন্য। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখনকার পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখানে যেতে দেওয়া হয় না তাঁকে, উল্টে তাঁর বিদেশযাত্রার ওপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

তবে এখানেই শেষ নয়। ডাক্তার মুখোপাধ্যায়কে ( Dr. Subhas Mukhopadhyay) প্রথমে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে, তারপর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। সব শেষে, রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি-র চক্ষু বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। আর এই অপমান তিনি সইতে পারেননি। তাঁর সারাজীবনের কাজ হরমোন গ্রন্থি নিয়ে। আর তাঁকেই কিনা বদলি করা হল চক্ষু বিভাগে। মনে করা হয় এই অপমানের ভার বইতে না পেরেই অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৯শে জুন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই এখান থেকে নানা রকম অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পান বলে দাবি করেন সেখানকার স্থানীয়রা। সেখানকার স্থানীয়দের দাবি রাত বাড়লেই ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আত্মহননের সেই ঘর থেকে ভেসে আসে বিভিন্ন ধরনের শব্দ। রাত নামতে সেদিকে এগোতেও নাকি পা কাঁপে সাধারণ মানুষের।