Mahua Raychowdhury: স্টোভ ফেটে দেহে আগুন, অক্ষত রান্নাঘর! মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুতে আজও রহস্যের আস্তরণ

আশির দশকের সূর্য তখন মধ্য গগনে। সালটা ৮৫, জুলাইয়ের বিরামহীন বৃষ্টি ঢেকেছে তিলোত্তমা। এমতাবস্থায়, দক্ষিণ কলকাতার ( South Kolkata ) আভিজাত হাসপাতালে নার্সিং হোমের আটতলায় ৭২২ নম্বর ঘরের মধ্যে বিছানা জুড়ে শুয়ে দগ্ধ একটি শরীর। সেই ঝলসানো অস্ফুট উচ্চারণে শুধু শোনা গিয়েছিল কয়েকটা শব্দ। বলেছিলেন, “আমার গোলা রইল। ওকে দেখিস।” একেবারে যেন সিনেমার দৃশ্য হলেও এটাই ছিল ২২ জুলাইয়ের কলকাতা সেই হাসপাতালের আটতলার ঘরের বাস্তব। বিছানায় শুয়ে ছিলেন অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরী। মৃত্যুর সঙ্গে টানা ১০দিন লড়াই করে অবশেষে হার মেনেছিল তাঁর শরীর।
শরীরের বহুলাংশেই থার্ড ডিগ্রি দহনের চিহ্ন তখনও জীবন্ত। মন হার মেনে নিয়েছিল তাঁর। মৃত্যুকালীন পাশে ছিলেন একজনই প্রিয় বান্ধবী রত্না ঘোষাল। মহুয়ার ( Mahua Raychowdhury ) মৃত্যুতে তরুণ মজুমদার ( Tarun Majumdar ) বলেছিলেন, জীবনে মৃত্যু নিশ্চিত কিন্তু মহুয়ার মতো মৃত্যু কারও যেন না হয়। এই ঘটনা নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল কলাকুশলীমহল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নিজে গোটা ঘটনার তদন্তের দায়িত্বভার দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, মাত্র ১৩ বছরের অভিনয় জীবন থেকে বাঁধ ভাঙা জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়েছিলেন তিনি। ছিলেন সিনেপাড়ার প্রথম শ্রেণীর নায়িকা। খুব অল্প বয়সেই অভিনয়া হাতে খড়ি হয়েছিল তাঁর। ২৮ বছর বয়সে তাঁর এই অস্বাভাবিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ইন্ডাস্ট্রি। একদিকে চলেছিল আইনি লড়াই, অন্যদিকে, মানুষের মুখে মুখে রটনা হয়েছিল একাধিক ‘রসালো’ গল্প। এই সবের মাঝেই যেন তখনও জীবন্ত ছিল সেই দহনজ্বালা। শেষ নিশ্বাস ত্যাগের পরও বাড়ির লোকের বয়ানে কোনও পরিবর্তন আসেনি।
তাঁর অভিনয় জীবন ছিল যতটা সাজানো, প্রেমিকা হিসাবে ছিলেন ততটাই বেপরোয়া। কৈশোরে প্রেম করে তিলককে বিয়ে করেছিলেন মহুয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক ঢুকে গিয়েছিল তিক্ততা। পরবর্তী অভিনেত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন তমাল। ডাক নাম ছিল গোলা। মৃত্যুর আগে অবধি তাঁর জন্যই চিন্তা করে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির লোক বারবার বলেছিলেন ছেলের জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে স্টোভ ফেটে মৃত্যু হয় মহুয়ার। কিন্তু এই বয়ানের ভিত্তিতে উপযুক্ত প্রমাণ মেলেনি কোনও দিনই। কারণ, রান্নাঘর ছিল অক্ষত, শুকানো অবস্থায় স্টোভটাও উদ্ধার হয়েছিল। এদিকে বাথরুম এবং শোয়ার ঘরে ছিল পুড়ে যাওয়া দাগ। বিস্ফোরণ কিন্তু চারিদিক একেবারে ঝকঝকে-চকচকে।
তাছাড়াও যার আশেপাশে, উপরে-নীচে সর্বদা পরিচারক-পরিচারিকা সে কী ভাবে সারাদিন খেটে এসে দুধ গরম করতে বসাবে? এই নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অনেকের দাবি, এটা আত্মহত্যা ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে পোড়ার দাগ সামনের দিকে বেশি হত কিন্তু হয়েছিল তার উল্টোটা। অনেকে মনে করেন, তাঁকে নাকি নীল ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেকের আবার দৃ়ঢ় দাবি, আত্মহত্যা নয় গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে নিজের মুখে সেদিন কোনও কিছুই স্বীকার করেননি মহুয়া। শুধু বলেছিলেন ‘গোলা’র কথা। হয় তো নিজের ছেলের পিছুটানেই সেদিন মুখ খুলতে চাননি তিনি।
দিন শেষে কারও বয়ানই একে অপরের সঙ্গে মেলেনি। ঠিক যেন নানা মুনির নানা মত। তাছাড়াও মৃত্যুর তদন্ত কিছুদিন চলার পর অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। মহুয়া রায়চৌধুরীর তদন্তের ফাইল বন্ধ হওয়ার সঙ্গেই যেন মুছে যায় সমস্ত ভয়ানক মুহূর্তগুলো। শুধু থেকে যায় তাঁর কীর্তিগুলি। আর সত্যি বলতে, আজ এত বছর পেরিয়ে হয় তো মানুষও ভুলতে বসেছে তাঁকে।