Naaz Joshi: দেহব্যবসা থেকে বিশ্ব সুন্দরী! তবু ভাগ্যের ফেরে আজও পথেই বাস প্রথম রূপান্তরকামী মডেলের

সৌন্দর্য শব্দটি যেখানে আপেক্ষিক সেখানে পুরুষ নারী, রোগা, স্থূল, ফর্সা কালোর গাত্রবর্ণ হয়ে যায় বিচারের মাপকাঠি। সমাজ এখনও নিজের তৈরি শিকলেই বন্দী। তাই আসল সৌন্দর্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও পড়ে থাকতে হয় আস্তাকুঁড়ে।দেশের প্রথম রূপান্তরকামী সুন্দরী নাজ জোশী। তার বিশ্ব জোড়া খ্যাতি, মুকুটে একাধিক আন্তর্জাতিক খেতাবের পালক। এক বার দুবার নয়, সাত বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রমাণ করেছেন নিজেকে। তবু আজও উপার্জনের জন্য নিয়মিত রাস্তায় দাঁড়াতে হয় তাঁকে। তাঁর একমাত্র কারণ সমাজের মাপকাঠিতে তিনি খাপছাড়া, তিনি রূপান্তরকামী।
img 20220908 224357
শিক্ষায় দীক্ষায় নেই কোন ত্রুটি।নিজের বশে নিজের উপার্জন চালিয়েছেন পড়াশোনা। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)-র ছাত্রী নাজ। পোশাক ডিজাইনিংয়ে স্নাতকে শীর্ষ স্থানাধিকারী ছিলেন নাজ। তবে কাঁটা বিছানো পথেই জয়ের গান লিখেছেন তিনি। নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে বারে নেচেছেন। এমনকি যৌনকর্মীর কাজ করেও উপার্জন করতে হয়েছে তাকে। বাবা-মা ছেড়েছেন হাত। পুরুষ দেহে কন্যা সন্তানের লক্ষণ দেখেই পরিবার করেছে ব্রাত্য। বরাবর নিজের খরচ বরাবর নিজেই বহন করেছেন। পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল প্রবল তাই সেই স্বপ্নকে হাত ছাড়া করেননি। শরীর কে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে গেছেন লক্ষ্য পূরণের দিকে। স্নাতকের পর, আইএমটি থেকে এমবিএ-ও করেছেন নাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন সংত্রান্ত অস্ত্রোপচারের খরচও জোগাড় করেছিলেন নিজেই।

পেশায় মডেল এক তুতো বোনের মাধ্যমে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় প্রবেশ করেন। আর তারপরে সেই তুতো বোনেরই অকাল মৃত্যুর পর মডেলিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০১২ সাল থেকে মডেলিং এজেন্সির কাজ করতে শুরু করেন। ২০১৪-এ প্রথম সৌন্দর্য্যর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন এমপ্রেস আর্থের খেতাব। মে মাসে ভারতের হয়ে এই আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন নাজ। গত ১ জুন সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। ওই প্রতিযোগিতায় নাজ একাই ছিলেন রূপান্তরকামী।আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নারীদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সেরা সুন্দরীর খেতাব ছিনিয়ে নেওয়া রূপান্তরকামী তিনিই প্রথম। তবে নাজকে তার জন্য অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি কমবয়সিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় বয়স নিয়েও কুমন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে মোট ১৫টি দেশের প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন প্রতিযোগিতায়। একজন রূপান্তরকামীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জেনে অনেকে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। সব অপমানের জবাব দেন সেরার খেতাবটি ছিনিয়ে নিয়ে।প্রশ্নোত্তর পর্বে দু’জনেই নাজের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

img 20220908 224300

করোনা মহামারির কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতিযোগীদের নানারকম কাজ করে নিজেদের প্রমাণ করেন। ইভনিং গাউন এবং নিজের দেশের জাতীয় পোশাক ও সংস্কৃতির প্রদর্শন করেন তিনি। সামাজিক দায়িত্ব পালনের কাজে গ্রাম্য মহিলাদের আত্মরক্ষার পদ্ধতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন নাজ।পুনরায় প্রমাণিত হয় তার সমাজ সচেতনতা। কোভিড মহামারিতে কি লকডাইন একমাত্র উপায়? এর চমৎকার উদাহরণ দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নাজ এর আগেও আরও বহু আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন। ২০২০ সালে ‘মিস ইউনিভার্স ডাইভারসিটি’র খেতাব পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পর পর ‘তিন বার মিস ওয়ার্ল্ড ডাইভারসিটির’ মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। এ ছাড়া মিস রিপাবলিক আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও সৌন্দর্য দূত হিসাবে নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। এত সাফল্য তবু ব্যক্তি জীবনে অন্ধকার কাটেনি। সমাজ মাধ্যমে তিনি ব্রাত্য। রূপান্তরিত নারী হওয়ায় জোটেনি একটি চাকরিও। এত সাফল্য বদলাতে পারেনি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। সামান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করছেন তবে তা অনিয়মিত। দুই সন্তান রয়েছে তার।একজন আই ভি এফের মাধ্যমে আর একটি কুড়িয়ে পাওয়া শিশু।দুজনকে দিতে পারছেন না নিশ্চিত ভবিষ্যত। এখনও অন্য বহু রূপান্তরকামীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে হাত পাতছেন বিশ্ব সুন্দরী। এখানেই প্রশ্ন ওঠে, সমাজ আজও এগিয়েছে কি?




Back to top button