“আশ্বিনের শারদ প্রাতে….”, ভোরে উঠে মহালয়া শোনা যেন নস্টালজিয়া, জানেন কি নেপথ্যে কোন কারণ

জয়িতা চৌধুরি,কলকাতা: মহালয়ার ভোর। আর মহালয়ার ভোর মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ( Birendra Krishna Bhadra ) কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ। এই দিনটির জন্য বাঙালি জাতি আর কোনও তিথির ধার ধারে না। বোঝে ভোর চারটের এক বেতার অনুষ্ঠান। প্রায় সব বাড়ি থেকেই শোনা যায় একই শব্দ। ভোরবেলার সেই আমেজ জানান দেয় পুজো এসে গেছে। বাঙালির ইমোশন, নস্টালজিয়া সবটা জড়িয়ে দূর্গা পুজো। দূর্বা ঘাসের উপর শিশির, শরতের পেঁজা তুলো, শিউলির আর নতুন জামার গন্ধ সব মিলিয়ে চারিদিকে কেমন যেন পুজো- পুজো গন্ধ।
১৯৩২-এ বাংলা বেতারকেন্দ্র আকাশবাণীতে বাণীকুমারের হাত ধরে তৈরি হল ‘বসন্তেশ্বরী’ নামক একটি গীতি-আলেখ্য। অনুষ্ঠানের গ্রন্থণা করছিলেন কিংবদন্তি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তৈরি হয়েছিল বাংলা বেতারের ইতিহাসে এক নব দিগন্ত। তখনও হয়নি নামকরণ, বা বলা ভাল তখনও এত জনপ্রিয়তা পায়নি অনুষ্ঠানটি। কিন্তু তখন থেকেই বাঙালির মনে তৈরি হল এক অলৌকিক সুরমূর্ছনা। ঠিক পরের বছর ১৯৩৩-এ হল পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। মহালয়ার সকালে বাজানো হল এই বিশেষ অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এই অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হতে থাকে।

mahalaya

একসময় নাম হয় ‘মহিষাসুর বধ’। সেখান থেকেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এই লাইভ অনুষ্ঠান এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে দীর্ঘ কয়েক বছর মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার হতে থাকে। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র স্নান করে শুদ্ধ আচারে এসে শ্লোক পাঠ করতেন। বর্তমানে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের রেকর্ডটিই মহালয়ার দিন ভোরে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে।

tarpan

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসবের সূচনাই ঘটে মহালয়া থেকে। জানেন কি এই দিনের তাৎপর্য? সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, যে কোন শুভ কাজ করতে গেলে পিতা-মাতা সহ পূর্ব পুরুষ ও সমগ্র জীব জগতের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়। করতে হয় অঞ্জলি প্রদানও। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী মুলত, তর্পণ আসলে সকলের মঙ্গল কামনা করা। ‘তর্পণ’ করার আক্ষরিক অর্থ খুশি করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগেও মহালয়ার দিন ঠিক এমনটাই করেছিলেন। সেই থেকেই হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাদের মা বাবা নেই, তাঁরা তাঁদের পিতা, মাতার উদ্দেশ্যে আত্মার শান্তি কামনা করেন। মহালয়ার (mahalaya) দিন তর্পন করেন।

শাস্ত্র মতে, তর্পণ শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও করতে পারে। সহজ ভাষায় প্রয়াত আত্মার সমাবেশকে মহালয়া বলে। এই বিশেষ দিনটিতে, পিতৃ পুরুষদের স্বরণের মধ্যে দিয়ে আত্মার তৃপ্তি লাভ করানো হয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনার দিনটি পরিচিত মহালয়া ( Mahalaya ) নামে।




Back to top button