যৌনপল্লী থেকে চলচ্চিত্রের মঞ্চে! অন্ধকার থেকে আলোর পথ খুঁজে পেলেন নলিনী জামিলা

যৌনপল্লীর অন্ধকার কোণকে যেন একটি মশাল উপহার দিলেন নলিনী জামিলা (Nalini Jamila)। কেরালার ত্রিশূর (Trishur, Kerala) শহরের একটি যৌনপল্লী উঠে এসেছিলেন তিনি। যৌনপল্লীর জীবনে তলিয়ে থাকা অন্ধকার থেকে উঠে এসে নলিনী জামিলা হয়ে উঠেছিলেন নারিবাদী ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ। এরপরেই, কেরালার রাজ্য চলচ্চিত্র উৎসবে (Kerala State Flim Festival) পুরস্কৃত হলেন তিনি। যদিও, সেই পুরস্কার পাওয়ার রাস্তায় ছিল প্রচণ্ড সংগ্রাম।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত পরিচালক মণিলালের পরিচালিত সিনেমা ‘ভারতপূজা (Bharatpuja)’। সিনেমাটির মূল চরিত্র একটি যৌনকর্মীর (Sex Worker)। যৌনকর্মীদের সঙ্গে থাকা অভিজ্ঞতার বশেই নলিনী যেন বাস্তব পোশাক-পরিচ্ছদ তুলে এনেছেন সিনেমায়। এর ফলেই কেরালার রাজ্য চলচ্চিত্র উৎসবে নলিনী জামিলা পুরস্কৃত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছদশিল্পী হিসেবে। তাঁর এই সম্মান অবশ্যই যৌনকর্মীদের জীবনে প্রেরণা জোগাবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

নলিনী জামিলা,যৌনপল্লী,চলচ্চিত্র,Sex Village,Movies,Awards,পুরস্কার,কেরালার রাজ্য চলচ্চিত্র উৎসব,যৌনপল্লী থেকে চলচ্চিত্রের মঞ্চে নলিনী জামিলা

নলিনী জামিলার এই পুরস্কার পাওয়ার রাস্তায় রয়েছে বিরাট সংগ্রাম। ১৯৫৪ সালে কেরলের কাল্লুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ার পর পড়াশোনার‌ও সুযোগ পাননি নলিনী জামিলা। মহিলাদের ক্ষেত্রে লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় তৃতীয় শ্রেণীর গণ্ডি অতিক্রম করার পরে গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। খুব কম বয়সে‌ই দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপরেই স্বামীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। কার্যত, বিনা চিকিৎসায় স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসার চালাতে ইটভাটায় কাজ নেন। কিন্তু, অল্প বয়সী বিধবা হ‌ওয়ায় দুর্বৃত্তদের কড়া নজরের জন্য কাজটি ছেড়ে দিলেও, পেট চালানোর জন্য যৌনপল্লীর অন্ধকার জীবন বেছে নেন।

নলিনী জামিলা,যৌনপল্লী,চলচ্চিত্র,Sex Village,Movies,Awards,পুরস্কার,কেরালার রাজ্য চলচ্চিত্র উৎসব,যৌনপল্লী থেকে চলচ্চিত্রের মঞ্চে নলিনী জামিলা

তাঁর সেই যৌনপল্লীর জীবন নিয়েই ১৬ বছর আগে লিখেছিলেন একটি ব‌ই। ‘একজন যৌনকর্মীর কথা’ নামক সেই ব‌ইটির প্রতিটি অক্ষরে ফুটিয়ে তুলেছেন, অসহায় জীবন, দালালদের সঙ্গে বিরোধ, পুলিশি ঝামেলা। ব‌ইটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ‌ও হয়েছে। এরপরেই তিনিই কেরালার যৌনকর্মীদের আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন। তারপর থেকেই যৌনকর্মীদের জীবনে একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য‌ই উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবন। ২০১৮ সালে তাঁর লেখা অন্য একটি ব‌ই থেকে জানা যায়, কীভাবে প্রেম আসে যৌনকর্মীদের জীবনে।

নলিনী জামিলার এই সমাজের সংস্কার করার কাজের সূত্র ধরেই বিখ্যাত পরিচালক মণিলালেল সঙ্গে পরিচয় ঘটে। মণিলাল নলিনীর জীবন সম্পর্কে জানতে পেরে এমন সিনেমা করার কথা ভাবেন। তারপরেই সিনেমার পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জার দায়িত্ব তুলে দেন বন্ধু নলিনীর কাঁধে। নলিনী সিনেমার সাজসজ্জা ছাড়াও অভিনেত্রী সিজি প্রদীপকে শিখিয়েছেন যৌনকর্মীদের বাস্তব আচার-আচরণ। যা সিনেমাটি আরোও বাস্তববাদী করে তুলেছে।




Back to top button