জ্যান্ত পুতুল! নড়েও না চড়েও না, মানুষ হয়েও দিব্যি মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকেন এই শিল্পীরা
শিল্পের নাম ‘লিভিং স্ট্যাচু (living statue)’!বিদেশে ভীষন চল। ডিজনি ল্যান্ডের রাস্তায় কিংবা কোনো পার্কের রাস্তায় হামেশাই দেখা মেলে এদের। সারা গায়ে কালি মেখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। যেন মনে হয় সত্যিই পাথরের কোনো মর্মর মূর্তি। কিন্তু আদতে তারা জীবন্ত মানুষ। এভাবেই পথ চলতিদের বিনোদন দিতে অভ্যস্ত তারা। কিন্তু ঠিক এমনই শিল্প ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বাংলাতেই।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও নদিয়ার শান্তিপুর (shantipur) এলাকায় বহু মানুষ ধিরে ধিরে যুক্ত হচ্ছেন এই মানব পুতুল পেশার সঙ্গে। এদের চাহিদাও তুঙ্গে উঠছে সময়ের সাথে সাথে। ডাক পাচ্ছেন পুজো, মেলা, বিয়েবাড়ি কিংবা জন্মদিনের মত নানা বিধ অনুষ্ঠানে। কখনো আবার পাড়ি দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গ এমনকি বিভিন্ন পার্শ্ববর্তী রাজ্য গুলিতেও।
শুনতে সোজা মনে হলেও বহুরূপী গোত্রীয় এই বিশেষ পেশা কিন্তু আদেও অত সহজ নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে পুতুলের অভিনয় করার জন্য লাগে সীমাহীন ধৈর্য, অধ্যাবসায় এবং সহ্য ক্ষমতা। অনেক সময় দর্শক তাদের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকলেও তাদের পলক ফেলার জো থাকে না। আর ফেলবেনই বা কি করে! এটাই যে তাদের কাজ, এই বিশেষ কারণেই তো তাদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ।
মশা কিংবা পিঁপড়ের কামড় সহাস্যে হজম করে যাওয়া তো খুবই সাধারণ। এমনও গল্প শোনা যায় যেখানে ক্রমাগত কাছে আসতে থাকা সাপের ভয়কেও উপেক্ষা করে জীবন্ত পুতুলের ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন এক শিল্পী। বর্তমানে প্রায় ১৫০০ জন মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। শান্তিপুর ও তার আশেপাশের আরো অনেক মানুষ ধিরে ধিরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। দলের সাথে মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক কিংবা গোপাল ভাঁড় সাজতে চলে যাচ্ছেন অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মত রাজ্যে।
এমন অনেকে আছেন যারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। তারা জানাচ্ছেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেভাবে বাড়েনি তাদের পারিশ্রমিক। তবু তাদের কাজের মাথাপিছু আয় অন্যান্য অনেক শ্রমের কাজের থেকে কিছুটা বেশি। তাই এখনো অনেকে ছুটে আসছেন এই পেশায় নিজের রুটিরুজির আশায়। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ৫০০ টাকা এবং মেলা জাতীয় সমারোহে ১০০০ টাকা করে পান এই বহুরূপী জীবন্ত পুতুল শিল্পীরা। তাদের সংগঠনও রয়েছে এলাকায়। যা পরিচিত বহুরূপী জীবন্ত মডেল কল্যাণ সমিতি।