সোনার গয়নাই বাঁচালো স্বামীর জীবন! ধনতেরাসের এই ইতিহাস জানতেন কি
দেখতে দেখতে একেবারে দোরগোড়ায় দীপাবলি। আর দীপাবলি বা দেওয়ালি মানেই গত কয়েক বছরে বাঙালির ডিকশনারিতে ঢুকে গিয়েছে আরো একটি শব্দ, ধনতেরস। আর ধনতেরাস মানেই বাঙালি হোক বা অবাঙালি হাসি ফুটবেই ঘরের মহিলাদের মুখে। কারণ এই দিনই সোনা বা রুপোর গয়না কেনার আদর্শ দিন। মনে করা হয় ধনতেরাসের দিন সোনা রূপো বা যেকোন ধাতুর মুদ্রা বা গয়না কিনলে সংসারে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
ধনতেরাস কথাটির আসল অর্থ লুকিয়ে আছে এর নামের মধ্যেই। দীপাবলির আগের ত্রয়োদশী তিথিকে বলা হয় ধন ত্রয়োদশী। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পুজিত হন লক্ষ্মী এবং কুবের। তবে এর পাশাপাশি আয়ুর্বেদের জনক ধন্বন্তরিকেও পুজো করা হয় কুবের এবং মহালক্ষ্মীর সঙ্গেই। অর্থাৎ সংসারে আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার প্রার্থনাও থাকে ধনতেরাসের পুজোয়।
ধনতেরাসের এই দিনটি নিয়ে হরেকরকম গল্প বা মিথ প্রচলিত হয়ে আছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে সমুদ্রমন্থনের সময়ে এই তিথিতেই দেবী মহালক্ষ্মী এবং কুবের একই সঙ্গে উত্থিত হয়েছিলেন। আবার আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী ধনতেরাসের দিন গয়না কিনলে মানুষ দীর্ঘজীবী হয়। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প প্রচলিত আছে।
রাজা হিমার ষোল বছর বয়সী পুত্রের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে সে তার বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে মারা যাবে। যখন এই দিনটি উপস্থিত হল তখন তার স্ত্রী একটি পরিকল্পনা করলেন। তিনি স্বামীকে কোনমতেই সারারাত ঘুমোতে দিলেন না। তার সমস্ত গয়না এবং সোনা রূপোর মুদ্রা দিয়ে তিনি স্তুপাকৃতি বানিয়ে ঘরের দরজায় রেখে দিলেন এবং সারারাত ধরে ঘরের সমস্ত আলো জ্বালিয়ে গান গল্প শোনানোর মধ্যে দিয়ে জাগিয়ে রাখলেন স্বামীকে। পরের দিন যথাসময়ে যখন যমরাজ এলেন তখন তিনি সেই গয়নার স্তুপ পেরিয়ে ঢুকতে পারলেন না ঘরে। উপরন্তু তিনিও মোহিত হয়ে শুনতে লাগলেন স্বামী স্ত্রীর গান এবং গল্প। এভাবে গোটা দিন পেরিয়ে গেল। পরের দিন নিঃশব্দে যমরাজ ফিরে গেলেন নববিবাহিত স্বামীকে না নিয়েই। এইভাবেই ধনতেরাসের দিন ধনসম্পদের জোরেই প্রাণ বাঁচল নববিবাহিত কিশোরের।
এইসব বিশ্বাসের মধ্যে দিয়েই ধনতেরাস সম্পদের তিথি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সোনা রূপো কেনার পাশাপাশি কেউ কেউ এই দিন বাসনপত্রও কিনে থাকেন। এই দিন মহারাষ্ট্রের যেসব বাড়িতে লক্ষ্মীর পুজো হয় তারা দেবতার উদ্দেশ্যে গুড় মাখা ধনের বীজ নৈবেদ্য হিসেবে অর্পণ করেন।