জেনে নিন ছট পুজোর নিয়ম এবং পৌরাণিক গুরুত্ব
দীপাবলি, ভাইফোঁটা পেরিয়েছে। উৎসব শেষে চারদিকে মনখারাপের সুর। তবু বারো মাসে তেরো পার্বণ এখনো শেষ হয়নি। সামনেই আসছে হিন্দুদের এবং প্রধানত অবাঙালীদের পার্বণ ছটপুজো। ছটপুজোর সবচেয়ে বেশি প্রচলন রয়েছে বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে। তবে ছট কিন্তু শুধুমাত্র বিহারেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলেও এই উৎসব যথেষ্ট সমারোহের সঙ্গে পালন করা হয়। সম্প্রতি প্রবাসী অবাঙালীদের হাত ধরে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতেও জনপ্রিয় হচ্ছে হিন্দুদের এই পার্বণটি।
ছট কথাটি এসেছে ষট বা ষষ্ঠী থেকে। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ছট উৎসব পালন করা হয়। তবে ছট পুজোর ব্রত শুরু হয় চতুর্থী থেকেই আর তা চলে সপ্তমী পর্যন্ত। ছট পুজোয় প্রধানত সূর্যের আরাধনা করা হয়। সূর্য এবং তার স্ত্রী ঊষাকে মিলিতভাবে পূজা এবং ব্রতের মাধ্যমে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় পৃথিবীকে উষ্ণতা দান করে জীবনের গতি বহাল রাখার জন্য। সূর্যের স্ত্রী ঊষাকে ছোটি মাঈ বলে সম্বোধন করা হয়।
ছট পূজার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। চারদিনের এই ব্রতের প্রথম দিন যিনি ব্রত পালন করেন তিনি বাড়িঘর পরিষ্কার করে শুদ্ধাচারে কুমড়োর সবজি ও ভাত দিয়ে নিরামিষ ভোজন করে বারো ঘন্টা উপবাসে থাকেন। তারপর বারো ঘন্টা পর সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত গেলে সামান্য কিছু খাবার খেয়ে উপবাস ভাঙতে হয়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ পঞ্চমীর দিন থেকেই সকাল থেকে সারাদিন নির্জলা উপবাস করে সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর পুজোর শেষে ক্ষীর ভোগ গ্রহন করতে হয়। এই প্রথার নাম খরনা। এরপর ষষ্ঠীর দিন বিকেলে নদী বা অন্যান্য জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অস্তগামী সূর্যকে দুধ অর্পণ করা হয়। এরপর উপবাস ভঙ্গ করে ঠেকুয়া, মিষ্টি, ক্ষীর এবং আখ, কলা প্রভৃতি খেয়ে প্রসাদ বিতরণ করতে হয়।
ছট পুজোর কোন নির্দিষ্ট মন্ত্র বা মূর্তি নেই। রামায়ণ এবং মহাভারত দুই জায়গাতেই ছট পুজোর উল্লেখ আছে। সূর্য বংশের সন্তান রাম নিয়মিত সূর্যের পুজো করতেন। বনবাসের পর অযোধ্যায় ফেরার সময়ে রাম ও সীতা সূর্যের পূজা ও ব্রত পালন করেন। সেই থেকে ছটের সূচনা বলে অনেকের মত। আবার মহাভারতে সূর্য ও কুন্তীর সন্তান কর্ণ ষষ্ঠী তিথিতে জলে দাঁড়িয়ে দরিদ্রদের প্রসাদ বিতরণ করেছিলেন। সেই থেকেও ছটের সূচনা হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।