সম্প্রীতিকে সামনে রেখে তোর্সা ইউনাইটেড ক্লাবের কালীপুজো

এই পুজোর দুই প্রধান আয়োজক মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাঁদের নাম সাহিরুদ্দিন মিয়া ও মহবুল আলম। তাঁদের সঙ্গে হাত লাগান গোপাল অধিকারী ও জয়ন্ত বর্মন নামের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি।

আলিপুরদুয়ার: “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, মুসলিম তার নয়ন মনি হিন্দু তাহার প্রাণ” বাঙালি সংস্কৃতিকে ঘিরে কবি জসীমউদ্দীনের এই জনপ্রিয় কবিতা আজও লেগে রয়েছে বাঙালির মনে। সময় পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু বাঙালির যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি, তা আজও অব্যাহত। আজও বাঙালি ভাতৃত্ব ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মাঝেমধ্যেই উঠে আসে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার খবর। কিন্তু বাঙালি সেই দাঙ্গার রক্তের ফোঁটা দীর্ঘদিন ধরে চলে থাকা নিজের সংস্কৃতির উপর পড়তে দেয়নি। এবার এই অভিনব থিমকে সামনে রেখে দেখা যেতে চলেছে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের এক কালীপুজো।

এই থিমটি তোর্সা ইউনাইটেড ক্লাবের কালীপুজোর। জানা গিয়েছে, এই পুজোর দুই প্রধান আয়োজক মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাঁদের নাম সাহিরুদ্দিন মিয়া ও মহবুল আলম। তাঁদের সঙ্গে হাত লাগান গোপাল অধিকারী ও জয়ন্ত বর্মন নামের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি। প্রতিবছর হিন্দু-মুসলিম, দুই সম্প্রদায়ের সম্মিলিত এই পুজোকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে। কালীপুজো বলেই সেটা সম্পূর্ণ হিন্দু ধর্মের, এখানে সেই বিষয়টি নেই। এখানের কালীপুজো হলো দুই সম্প্রদায়েরই পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পুজোকে নিজেদের পুজো বলে মনে করেন। পুজোর কাজে হাত লাগানো থেকে শুরু করে বসে খিচুড়ি খাওয়া, সবকিছুই একসাথে করেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিবছর এখানে মানুষের ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। করোনা আতঙ্কের জন্য কয়েক বছর বন্ধ ছিল এই পুজো। তবে এই বছর আবার পূজো হবে এবং আগের মত ষোলো আনা রীতি মেনেই পুজো হবে।Kali Puja,Festival,Religion,Alipurduar

পূজোর ইতিহাস সম্বন্ধে জানা গিয়েছে, একসময় তোরসা নদীতে পাকা সেতুক ছিল না এবং ১৫০টি মুসলিম পরিবার নৌকা চালিয়ে উপার্জন করতো পরিবারের জন্য। ২০০৫ সালে আকাশেতু তৈরি হওয়ার পর নৌকা চালানোর বদলে এই মুসলমান পরিবারগুলি পাথর তুলে অর্থ উপার্জন করতো। পেশা বদলে যায় কয়েকটি হিন্দু পরিবারেরও। এরপর ওই মুসলিম পরিবারগুলি নদীর ধারে রাজিব গান্ধী হাটে কালীপুজো করে আসছে। এই পূজোয় উপোস করে থাকেন মুসলিম পরিবারের এক কর্তা এবং আয়োজনের কাজে হাত লাগায় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ।




Leave a Reply

Back to top button