Bengali cuisine restaurant: জেনে নিন কলকাতার বুকে বাঙালি খাবারের সেরা ঠিকানা
উইকেন্ডে(weekend) সুস্বাদু খাবারের ঠিকানা মানেই সুন্দর করে সাজানো কোন নামী রেস্তোরাঁ(restaurant)। তবে সবসময়ে ইতালিয়ান(Italian), চাইনিজ(Chinese), কন্টিনেন্টাল(continental) খাবার খেতে রেস্তোরাঁয় যেতে মন চায় না। মাঝেমধ্যে পুরোনো দিনের সেইসব বাঙালি খাবার খেতেও মন চায় যেগুলো বাড়িতে রান্না করা বেশ ঝঞ্ঝাটের কাজ। তবে এই ইচ্ছা পূরণ করতে খাস কলকাতাতেই খাঁটি বাঙালি খাবারের বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। আজ রইলো তারই সুলুক সন্ধান।
আহেলি
কলকাতার প্রথম সম্পূর্ণ বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ হিসেবে আহেলি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৩ এ স্থাপিত এই রেস্তোরাঁতে বিভিন্ন প্রদেশের খাবার পাওয়া গেলেও সেকালের বাংলার হারানো অভিজাত জমিদারি খাবারের পীঠস্থান বলা যেতে পারে আহেলিকে। রেস্তোরাঁর ভেতর চলমান বাংলা গান এবং বাঙালি পোশাকে সজ্জিত বেয়ারা রেস্তোরার আবহকে আরো মায়াময় করে তুলেছে। এই রেস্তোরাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাবার বা যাকে বলে সিগনেচার ডিশ(signature dish), তা হল কষা মাংস।
- বালিগঞ্জ প্লেস
সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তোরাঁর মূল বিল্ডিংটি দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের একটি সাদা রঙের পুরোনো বাংলোতে অবস্থিত। এখানকার খাবারের বিশেষত্ব হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার অর্থাৎ জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের প্রচলিত একাধিক খাবারের উপস্থাপনা। এর মধ্যে সিগনেচার ডিশ হল ডাব চিংড়ি। তবে এই রেস্তোরাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় আইটেমগুলি পরখ করতে চাইলে ক্রেতাকে নিতেই হবে এখানকার বিখ্যাত ব্যুফে সার্ভিস। কসবাতেও এই রেস্তোরাঁর একটি শাখা রয়েছে।
ওহ! ক্যালকাটা
নামে ওহ! ক্যালকাটা হলেও কলকাতার এই বিখ্যাত রেস্তোরাঁটি ভারতের বিভিন্ন শহরে খুলেছে তাদের শাখা। বছরের পর বছর ধরে যে বাঙালি খাবারগুলি বাংলার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে তাদেরকেই নতুনভাবে পরিবেশন করে ওহ! ক্যালকাটা। এখানকার সিগনেচার ডিশ এর মধ্যে অন্যতম স্মোকড ইলিশ, ভেটকি মাছের পাতুরি, চিংড়ির মালাইকারি এবং কাঁচালঙ্কা মুরগি। বর্ষার মরসুমে এই রেস্তোরাঁয় ইলিশ উৎসব হয় যা খাদ্যরসিকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
সপ্তপদী
১৯৬১ সালে উত্তম কুমার সুচিত্রা সেনের আইকনিক ছবি সপ্তপদীর নামে নাম রাখা কলকাতার এই রেস্তোরাঁও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছবির মতোই। রেস্তোরাঁর ভেতরের সাজসজ্জায় রয়েছে এই ছবির আইকনিক দৃশ্যের একাধিক ছবি। পাশাপাশি পুরোনো দিনের বাংলা ছবির গান চলতে থাকে এই রেস্তোরাঁর ভেতর। রঞ্জন বিশ্বাস এবং স্বরূপ মন্ডল নামে দুই রন্ধনশিল্পী এই রেস্তোরাঁটি চালু করেন। সপ্তপদীর অভিনব মুরগী এবং সপ্তপদীর অভিনব মাংস এই রেস্তোরাঁর দুটি সিগনেচার ডিশ।
কস্তুরী
খাস কলকাতায় বসে বাংলাদেশের খাবার পাওয়া সহজ কথা নয়। তবে ধর্মতলার নিউ মার্কেট এলাকার কস্তুরী ১৯৯৪ সাল থেকে বাঙালিকে পরিবেশন করছে খাঁটি বাংলাদেশী খাবার। কচুপাতা চিংড়ি ভাপা এই রেস্তোরাঁর প্রধান সিগনেচার ডিশ। বর্তমানে বালিগঞ্জ এবং হিন্দুস্তান রোডেও রয়েছে এই রেস্তোরাঁর শাখা।
দ্য ভোজ কোম্পানি
কস্তুরীর পাশাপাশি ঢাকাই বাংলাদেশী রান্নার আরো এক খাস রেস্তোরাঁর নাম দ্য ভোজ কোম্পানি। বি.বা.দী বাগ এবং সল্টলেকে রয়েছে এই রেস্তোরাঁর দুটি শাখা। কলকাতার সবচেয়ে ভালো কচুপাতা চিংড়ি ভাপা পাওয়া যায় এই রেস্তোরাঁতেই। পাশাপাশি আলু পোস্ত এবং চিতল মাছের মুইঠ্যা খেতেও যথেষ্ট পছন্দ করেন এই রেস্তোরাঁর গ্রাহকরা।
ভজহরি মান্না
সাধারণ ঘরের রান্নাকেই একটু অন্যভাবে ভিন্ন স্বাদে খেতে চাইলে কলকাতার খাদ্যরসিকদের সেরা ঠিকানা ভজহরি মান্না। মান্না দের সত্তর দশকের বিখ্যাত গান আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না অনুসরণে নাম দেওয়া হয়েছে এই রেস্তোরাঁটির। গড়িয়াহাট এর হিন্দুস্তান রোডের শাখাটিই কলকাতার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে এ ছাড়াও একডালিয়া, হাজরা, সল্টলেকের সেক্টর ওয়ান এবং সেক্টর ফাইভ, স্টার থিয়েটার, রুবি এবং এসপ্ল্যানেডে রয়েছে এই রেস্তোরাঁর একাধিক শাখা।
কিউপাই’স কিচেন
কলকাতায় পারিবারিক এবং ঘরোয়া রেস্তোরাঁর মধ্যে অন্যতম কিউপাই’স কিচেন। মালিকের বাড়িতেই অবস্থিত এই রেস্তোরাঁয় মাত্র পঞ্চাশ জন অতিথি বসতে পারেন। কলাপাতায় পরিবেশন করা সাবেকি বাঙালি খাবার এই রেস্তোরাঁর অন্যতম আকর্ষণ।
কষে কষা
কষা মাংসের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা সর্বজনবিদিত। সেই কারণেই অভিনব নামের এই রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব একাধিক রকমের কষা মাংসের উপকরণ। তবে কষা মাংসের পাশাপাশি এই রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জাও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। গ্রামীণ কুটির শিল্প দিয়ে সাজানো এই রেস্তোরাঁর পরিবেশেও গ্রাম্য ছোঁয়া রয়েছে। রিপন স্ট্রীট, হাতিবাগান, গোল পার্ক এবং চিনার পার্ক সহ একাধিক জায়গায় রয়েছে এই রেস্তোরাঁর শাখা।
সোনার তরী
সল্টলেকে নতুন উদ্বোধন হওয়া এই রেস্তোরাঁটির অন্দরসজ্জা যথেষ্ট জমকালো। একান্ত মুহূর্ত কাটানোর জন্য সুন্দর করে সাজানো দুটি বড় ডাইনিং রুম রয়েছে যেখানে কোনরকম উৎসবের আয়োজন করাই যায়। এখানকার মূল আকর্ষণ ষোলটি ডিশ সমৃদ্ধ বাঙালি থালি যেখানে প্রতি চারদিন অন্তর অন্তর মেনু পরিবর্তিত হতে থাকে। পাশাপাশি এখানকার আচারও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।