Rishi Arabinda: বিপ্লব থেকে আধ‍্যাত্মবাদ, মৃত‍্যুদিনে ঋষি অরবিন্দের জীবনের কিছু অজানা কাহিনী জেনে নিন

ভারতবর্ষে অগ্নি যুগে দার্শনিক(philosophical)এবং আধ‍্যাত্মিক(spiritual) পথে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন ঋষি অরবিন্দ ঘোষ। পাশাপাশি অরবিন্দ পন্ডিচেরিতে আশ্রম বানিয়ে নিজের জীবনের একটা বড় সময় অতিক্রান্ত করেছিলেন আশ্রমেই। আজও তাঁর আধ‍্যাত্মবাদ এবং ভারতীয় দর্শনের আসল মর্ম অনুধাবন করতে সারা পৃথিবীর মানুষ ভীড় জমান তাঁর পন্ডিচেরির আশ্রমে।

প্রথম জীবনে সরাসরি বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এবং পরবর্তীকালে হয়ে ওঠা ভারতবর্ষের অন‍্যতম আধ‍্যাত্মিক এবং দার্শনিক যোগীপুরুষ, সমস্তটা মিলিয়ে অরবিন্দ ঘোষ থেকে ঋষি অরবিন্দ হয়ে ওঠার যাত্রাপথ ছিল একইসঙ্গে বিচিত্র এবং বর্ণিল। আজ তাঁর মৃত‍্যুবার্ষিকীতে জেনে নেওয়া যাক ঋষি অরবিন্দের জীবনের এমনই কিছু অজানা বর্ণময় কাহিনী।

know about unknown facts of Rishi Arabinda on his death anniversary

বিপ্লব থেকে আধ‍্যাত্মবাদ,  অরবিন্দের জীবন যে খাতে বয়ে গিয়েছিল ঠিক তেমনটা সম্ভবত চাননি অরবিন্দ ঘোষের পিতা ডক্টর কে ডি(Dr. K.D Ghosh) ঘোষ তথা কৃষ্ণধুন ঘোষ। সেই কারণে জন্মের পর অরবিন্দর পুরো নাম দেওয়া হয় অরবিন্দ অ্যাক্রয়েড(Akroyd) ঘোষ।  সাহেবি কেতায় অভ‍্যস্ত এই মানুষটি চাইতেন যে তার সন্তান মানুষ হবে ইউরোপীয় পদ্ধতিতে। সেই কারণে প্রাথমিক শিক্ষার জন‍্য দার্জিলিংয়ের লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করা হল অরবিন্দকে।

এরপর বালক অরবিন্দকে মাত্র সাত বছর বয়সে তাকে ইংল‍্যান্ড পাঠিয়ে দেওয়া হয় সম্পূর্ণ ইউরোপীয় শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করে তুলতে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে তিনি শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। পাশাপাশি গ্রীক, জার্মান, ইতালীয়, ফরাসি, ল‍্যাটিন এবং স্পেনীয় ভাষাও শেখেন অরবিন্দ। সম্পূর্ণ ইউরোপীয় শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৮৯২ সালে মাতৃভুমিতে ফিরে আসেন অরবিন্দ।

know about unknown facts of Rishi Arabinda on his death anniversary

তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।  কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করতে  না চাওয়ায় যোগ দেননি চাকরিতে।। তবে ১৮৯৩ সালে, তিনি বরোদা স্টেট সার্ভিসে যোগদান করেন। সেখানে তিনি তেরো বছর চাকরি করেন এবং বরোদা স্টেট কলেজের অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হন। এখানে তিনি সংস্কৃত এবং বাংলা ভাষা শেখেন। পাশাপাশি  বেদ, উপনিষদ, মহাকাব্য এবং মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাও চর্চা করতেন অরবিন্দ । ১৯০১ সালে, তার সঙ্গে বিবাহ হয় মৃণালিনী বসুর।

বরোদা থেকেই তিনি বাংলা এবং মধ‍্যপ্রদেশের জাতীয়তাবাদী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। এই সময়ে তিনি লোকমান‍্য তিলক এবং ভগিনী নিবেদিতার সংস্পর্শে আসেন। পাশাপাশি বরোদা সৈন‍্যদের জন‍্য যতীন্দ্রনাথ ব‍্যানার্জীর নেতৃত্বে মিলিটারি ট্রেনিংয়ের ও ব‍্যবস্থা করেন। বঙ্গভঙ্গের সময় তিনি জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব দেন। এই সময়ে তিনি কলকাতা চলে আসেন এবং অনুশীলন সমিতি গড়ে তোলেন।

know about unknown facts of Rishi Arabinda on his death anniversary

পরে তিনি বন্দে মাতরম নামে একটি জাতীয়তাবাদী বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হন। এরপর তিনি ১৯০৮ সালে তিনি আলিপুর বোমা মামলায় জেল বন্দী হন। প্রায় এক বছর কেস চলার পর তার পক্ষের উকিল হিসেবে লড়াই করা চিত্তরঞ্জন দাসের তৎপরতায় মুক্তি পান। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি দুইটি  প্রকাশনা সংস্থা শুরু করেন ইংরাজিতে কর্মযোগ এবং বাংলায় ধ‍্যান নামে। এরপর উত্তরপাড়ায় এক ভাষণে দেশবাসীকে জানান তার সশস্ত্র বিপ্লব থেকে বিদায় নিয়ে আধ‍্যাত্মবাদ এ নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত।

তার দুই বছর পরে, তিনি পন্ডিচেরির (পুদুচেরি) ফরাসি কলোনিতে আশ্রয় নেন।  এখানেই তিনি তাঁর বাকি জীবন “অখণ্ড যোগের” বিকাশে নিয়োজিত করেছিলেন।  তার লক্ষ্য ছিল আধ্যাত্মিকভাবে পার্থিব জীবনকে রূপান্তরিত করা। ১৯১৪ সালে আর্য নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন অরবিন্দ। পরবর্তীতে The Life Divine, The Synthesis of Yoga, Essays on The Gita, The Secret of The Veda, Hymns to the Mystic Fire, ইত‍্যাদি একাধিক বই প্রকাশ করেন অরবিন্দ।

know about unknown facts of Rishi Arabinda on his death anniversary

তাঁর অনুপ্রেরণামূলক চিঠিগুলি Letters of Yoga নামে একটি তিন খণ্ডের বইতে সংকলিত হয়েছিল।  প্রায় ২৪০০০ লাইনে গদ‍্য ছন্দে রচিত সাবিত্রী একটি মহাকাব্য আধ্যাত্মিক কবিতা যা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অরবিন্দ ঘোষ লিখেছিলেন।  মহাকাব্যটিকে আধ্যাত্মিকতার উপর সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়




Back to top button