Atlee Kumar: লোকে ডেকেছে ‘কালুয়া’ বলে! অপমানকে এড়িয়ে আজ শাহরুখের সিনেমার পরিচালক সে

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : ভারতে আজও মানুষকে বিচার করা হয় তাঁর গায়ের রং কিংবা তাঁকে দেখতে কতটা সুন্দর তার ওপর। যোগ্যতার নিরিখে বিচার করা হয় খুব কমই। আর যদি কেউ চায় তাঁর যোগ্যতার নিরিখে এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেখাবে তাহলে তাঁর জন্য সেই পথ হয়ে ওঠে অতি দুর্গম। গায়ের রং কালো হওয়ায় না চাইতেই সমাজ থেকে একাধিক নাম দিয়ে দেওয়া হয় এদের। কালু, কালুয়া না জানি এমন কত নামই দেওয়া হয় এদের। আর এই সমাজে থেকে এর অন্যথা ঘটেনি বর্তমানের জনপ্রিয় পরিচালক অ্যাটলির ( Atlee Kumar) ক্ষেত্রেও। কিন্তু সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে আজ সেই কালো ছেলেটাই বলিউডের কিং খানের ( SRK) পরবর্তী সিনেমার পরিচালক। এই কালো ছেলেটাই দক্ষিণী সিনেমার পর্দা কাঁপিয়ে এবার কাঁপাতে আসছে বলিউড। আজ আমরা কথা বলব দক্ষিণী সিনেমা জগতের জনপ্রিয় পরিচালক অ্যাটলি কুমার ( Atlee Kumar) সম্পর্কে।
একসময় নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছিলেন অ্যাটলি। ঘটনাক্রমে তাঁর বান্ধবীর গায়ের রং ছিল ফর্সা। ছেলের গায়ের রং কুচকুচে কালো আর মেয়ে এরকম ফর্সা। ব্যাস এবার মানুষকে থামায় কে? তাঁদের বিয়ের ছবি সামনে আসতেই শুরু হয়ে যায় নানা ধরনের কথা। কারও কথায় শুধুমাত্র টাকার জন্য মেয়েটি বিয়ে করেছে এরকম একটি কালো ছেলেকে। আবার কারও কথায় ছেলেটি নাকি জানতো কালা জাদু তাই তো বিয়ে করতে পেরেছে এরকম সুন্দরী মেয়েকে। এমনকী এখানেই শেষ নয় বন্ধু মহলেও বেশ অনেক কথার শিকার হতে হয়েছিল স্বামী স্ত্রীকে। তখন দুজনে মুখ বুজে সহ্য করেছিল সবকিছু। এই ছেলেটি হল অ্যাটলি কুমার ( Atlee Kumar)। এখনও পর্যন্ত ৪টি ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি। আর এই ছবি তাঁকে করে তুলেছে বক্স অফিসের বাদশা।

ছোটবেলা থেকেই রজনীকান্তের ( Rajnikant) ভীষণ বড়ো ফ্যান ছিলেন অ্যাটলি। তখন থেকেই সিনেমার প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠে অনেক অ্যাটলির মনে। ইচ্ছে ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। কিন্তু এই চেহারায় যে তাঁকে কেউ নেবে না সিনেমায় তা ভালো করেই জানতো তিনি। পর্দায় অভিনয় করতে না পারলেও ইচ্ছে ছিল কোনও না কোনো ভাবে সিনেমার সাথে যুক্ত থাকার। আর তাই সিনেমার গল্প লিখে বিভিন্ন প্রযোজকদের কাছে হাজির হতেন তিনি। একেই ইন্ডাস্ট্রির কারও সাথে পরিচয় নেই তার ওপর ২২ বছর বয়স মাত্র স্বাভাবিকভাবেই কোনও প্রযোজকই পাত্তা দেয়নি তাঁকে।

এই দুঃসময়ে অ্যাটলি ( Atlee Kumar) পাশে পেয়েছিল তাঁর বান্ধবীকে। সেই সময় দুজনেই তামিল চলচ্চিত্র জগতে করছিলেন সংগ্ৰাম। ছবির গল্প লিখে প্রযোজকদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন অ্যাটলি। আর তাঁর স্ত্রী অডিশন দিতেন তামিল ইন্ডাস্ট্রির ধারাবাহিক গুলোতে ছোটো চরিত্র পাওয়ার জন্য। এমন সময় হঠাৎই একদিন কৃষ্ণা জানান তাঁর বাড়ি থেকে ছেলে খোঁজা হচ্ছে বিয়ের জন্য। এমতাবস্তায় ভেঙে পড়লেও মজার ছলে অ্যাটলি বলে তাঁর কুষ্টি বাড়িতে দেখাতে। মজা করে কথাটা বলা হলেও কৃষ্ণা সত্যি অ্যাটলির কুষ্টি দেখায় বাড়িতে। এরপরই বিয়ে হয় অ্যাটলি কুমার আর কৃষ্ণাপ্রিয়ার ( Krishna Priya)। আর বিয়ের পরই ভাগ্যের শিকে ছেড়ে অ্যাটলির। রজনীকান্তের সঙ্গে ছবি করার সুযোগ পান তিনি। তবে ক্যামেরার পিছন থেকে। শঙ্করের জনপ্রিয় সিনেমা ‘রোবট’ সিনেমায় সহ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি। এরপর অ্যাটলির পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘রাজা রানী’ সিনেমাটি। মুক্তির পরই বিশাল হিট হয় এই সিনেমা। এরপর অ্যাটলি তাঁর লেখা কাহিনী শোনান দক্ষিণ সিনেমার সুপারস্টার বিজয় থালাপাতিকে। তাঁর লেখা কাহিনী দারুণ পছন্দ হয় বিজয়ের। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাটলিকে। একে একে তিনি দর্শকদের উপহার দিতে থাকেন ‘থেরি’ ( Theri), ‘মারসাল’এর মতো সিনেমা। এবার শাহরুখ খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে দর্শকদের উপহার দিতে চলেছেন ‘জওয়ান’ ( Jawan) সিনেমা। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ উত্তেজিত দর্শক। সাফল্যের পথে যে গায়ের রং কিংবা চেহারা কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না তা প্রমাণ করে দেয় অ্যাটলি কুমার।