Durga Puja 2022: যার বিকট হাসিতে ভোরের আলোয় বুকে ভয় ধরত, চাকচিক্যের অভাবে আর কাজের ডাক পান না ‛অমল অসুর’

জয়িতা চৌধুরি,কলকাতাঃ তখনও মোবাইল বা ইন্টারনেটের প্রচলন হয়নি। আর তাই মহালয়ার দিন ভোর পাঁচটা বাজলেই টিভির পর্দায় দেখা যেত দেবী দুর্গার সঙ্গে অসুরের লড়াই করতে দেখা যেত অমল চৌধুরিকে। পাড়ায় তাই সকলে তাঁকে চেনেন ‘অমল অসুর’ বলে। এখন অবশ্য সেই সময় বদলেছে। টিভি, রেডিওকে বহু পিছনে ফেলে রেখে আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসিয়েছে সকলে। আর তাই আজকের প্রজন্ম কোঁকড়া চুল, পেশিবহুল অসুরকে ঠিক কতটা চেনেন তা এক বড় প্রশ্নের মুখে।
দূরদর্শনে মহালয়ার অসুরের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য ডাক পড়ত অশোকনগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অমল চৌধুরির ( Amal Choudhury )। দীর্ঘদিন যাবৎ অসুর ও যমরাজের ভূমিকায় অভিনয় করে মন জয় করে রেখেছিলেন দর্শকদের। তবে সেই সন সোনালি দিনগুলো আজ অতীত। পুরনো দিনের কথা মনে পড়লেই তাই মনখারাপ হয়ে যায়। তিনি জানান, দুই টেকনিশিয়ানের নজরে এসে অভিনয় জগতে আসে অমলবাবু। তাঁর অতিকায় চেহারা আতঙ্কের কারণ ছিল বাচ্চাদের।
প্রথম সারির অভিনেতা- অভিনেত্রী বা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করলেও আজ লোকচক্ষুর আড়ালে অভিনেতা। বহুদিন হয়ে গেছে ডাক পাননা স্টুডিয়ো পাড়া থেকে। আর তাই তাঁর দিন কাটছে চরম অভাবে। অসুস্থ বোনকে নিয়ে টানাটানির সংসার তাঁর। অভাবের তারনায় অভিনয় ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছেন রঙ-তুলি। হাতে গোনা কয়েকটি আঁকার টিউশানি করেই দিন কাটছে তাঁর। অতীতের সেই সময়ের ছবি দেখলেই ভারাক্রান্ত হয়ে যায় অমল বাবুর মন। আত্মীয়রাও আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাদের থেকে। মেলেনি কোন সরকারি সাহাজ্যও। বয়সের ভারে এখন অনেকটাই হারিয়েছে সেই রূপ। বার্ধক্য থাবা বসিয়েছে জীবনে। তবুও, বড় বড় সেই চোখ ও পাকানো গোঁফ দেখলে চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয় না কারোরই।
অশোকনগরে নাট্য চর্চায় অমল বাবুর অভিনয় সারা ফেলে দিয়েছিল এককালে। টিভির পর্দায় দাদাকে দেখে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠতেন বোন ডলি চৌধুরি। সকলেই জিজ্ঞেস করতেন দাদার অভিনয়ের ব্যাপারে। গর্বে বুক ফুলে উঠত তাঁর। আজ আর অভিনয়ের জন্য ডাক আসে না এই অভিনেতার। সেই আক্ষেপের কথাই শোনা গেল শিল্পীর গলায়।