P. C. Sorcar Jr. : “ঈশ্বর আমাকে আর বাংলায় জন্ম দিও না”, কোন প্রসঙ্গে এমন বললেন জাদুর সম্রাট পিসি সরকার?

আত্মঘাতী বাঙালি!এই শব্দের আবার পুনরাবৃত্তি ঘটল যাদু সম্রাট পিসি সরকারের মুখে। যিনি আশ্চর্য প্রদীপের জিনের মতো এক লহমায় বদলে দিতে পারেন সমস্ত দৃশ্য। যার কাছে রুমাল থেকে বেড়াল, আর বেড়াল থেকে রুমাল একেবারে জলবৎ তরলং। আট থেকে আশি যার মায়া যাদুতে হয় মন্ত্রমুগ্ধ তিনি বলছেন ,”আমি আর এই বাংলায় জন্মাতে চাই না”। মুচি হই বা কৃষক অন্য কোন দেশের তাতে নেই দুঃখ কিন্তু এই কলুষিত বঙ্গকে মুক্ত করার যাদু নেই। তাই যাদুকর হিসাবেও এই বাংলায় আমি ব্যর্থ। কিন্তু এ কোন যন্ত্রণা নাকি বিদ্রুপ? ক্ষোভ নাকি শ্লেষ? কী বলতে চাইলেন জুনিয়র পিসি সরকার?
১১৭ টা দেশ যার নখদর্পণে। বিট্রেন হোক বা ফ্রান্স বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েও যিনি জগদ্বিখ্যাত যাদুকর। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন বাঙালি হিসেবে সর্বোপরি ভারতীয় হিসেবে। একটানা জাপানে তিন বছর শো করা, বিট্রেনে মাসের পর মাস শো করা, নিউইয়র্কে যিনি রেখে এলেন জাদুর ছোঁয়া। তিনি আজও তার যোগ্য উত্তর সূরি পেলেন না। শুধু তাই কেন কোন ক্ষেত্রেই রোজনামচা আর চাকরির বাইরে বাঙালি বেরলো না, এই তার আক্ষেপ। তাই তিনি বলেন,
“এই নাকি বাঙালি। যে চেয়ারে সুভাষচন্দ্র বোস বসতেন, চিত্তরঞ্জন বোস বসেছেন, এই দেশের জন্য ক্ষুদিরাম নিজেকে ফাঁসিতে দিয়েছেন, এদের জন্য বিনয়-বাদল-দীনেশ শহীদ হয়েছেন?? ওঁদের নাম ভাঙিয়ে অপমান করা হচ্ছে, আমার রক্তকে অপমান করা হচ্ছে, আপনারা যাই বলুন না কেন আমি ক্ষুব্ধ! এই ধরণের লোকেরা যদি থাকে, আমি আর এই দেশে জন্মাব না। আমি ঈশ্বরকে বলবো, আমাকে যা শাস্তি দাও, কিন্তু বাংলায় জন্ম দিও না।” হ্যাঁ এমনই ক্ষোভের স্তূপ জমেছে তার বুকে। তিনি বলেন, বাঙালির ক্ষমতার এখনও সঠিক পরিমাপ হয়নি, ঐ একটা দুটো স্ফুলিঙ্গের মতো ছিটকে বেরিয়েছে, একটা সুভাষচন্দ্র, একটা রাজা রামমোহন একটা বিদ্যাসাগর দিয়ে বাঙালি তৈরি হওয়ার কথা ছিল না। বাঙালি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জাতি সেটাকে শেষ করে দেওয়া হল।
দেশ তথা রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সজাগ। এক বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিনি। ফলে পিসি সরকার যে নিরপেক্ষ ভাবে বলবেন এ আশা করা বৃথা। তবে কারও সুনাম বা দুর্নাম নয়, বাঙালিকে নিয়ে বলা কথাগুলিকে সমর্থন জানিয়েছেন নেটিজেনরা। দেশের বাইরে ও ভেতর থেকে বাংলার চিত্র যে আলাদা তা পিসি সরকার জানেন। দেশে ও দেশের বাইরে যত ছেলেরা কর্ম সূত্রে যাচ্ছেন তারা হোটেলে হাউস কিপার অথবা শৌচাগার পরিষ্কারের চাকরি করছেন। কোনও কাজই ছোট নয়, কিন্তু কলেজ পাস করা শিক্ষিত ছেলেদের এমন ভবিষ্যত তিনি কল্পনা করতে পারেননি। বাঙালির সমস্ত সম্ভাবনা একেবারে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। চাকরি বিক্রয় বা ঘুষের টাকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। পিসি সরকার জানান, “এই চোর গুন্ডা বদমাশদের দেশে আমি আর জন্মাতেই চাই না। এরা যতদিন থাকবে ততদিন আমি আর জন্মাব না”! তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পসত্তাকে পাশাপাশি রেখে তিনি জানান, শিল্পসত্তাকে তিনি চিরকাল এগিয়ে রেখেছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি জানান,” আমি কোনদিন মন্ত্রী হতে চাইনি, আমায় তো লোকে সম্রাট বলে, আমি জেনেশুনে নিজের পদ কেন ছোট করব! সম্রাট থেকে মন্ত্রী হব কেন? মানুষ আমার পাশে কতটা আছেন সেটা বোঝার ছিল। বুঝে গেছি। আমি জানি আমি কি? আমি যাদু সম্রাট পি সি সরকার। ছিলাম আছি। থাকব।”