Randeep Hooda: সুস্মিতার সঙ্গে সম্পর্কে কাটাছেঁড়া, বলিউড দেয়নি যোগ্য সম্মান, ৪৬ তম জন্মদিনে ফিরে দেখা রণদীপের জীবন

কথায় আছে, ‘আগে দর্শনধারী, পিছে গুণ বিচারী’। বলিউড ( Bollywood ) ইন্ড্রাস্ট্রি আজও এই প্রবাদকে অক্ষরে অক্ষরে মান্যতা দেয়। সেজন্য বলিউডে এমন অনেক অভিনেতা রয়েছেন যারা প্রচুর সংগ্রাম করার পরেও তাদের প্রাপ্য সাফল্য পাননি। দর্শকরা তার অভিনয়কে আদর্শ মনে করলেও তাকে তারকার মর্যাদায় ভৃষিত করা হয়নি। এই তালিকায় উঠে এসেছে অভিনেতা রণদীপ হুদার ( Randeep Hooda) নাম। রণদীপ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ২০০১ সালে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। অথচ স্বীকৃতি পেতেই তাঁর ৯ বছর সময় লেগেছিল। আজ, যদিও তিনি অনেক বড় অভিনেতার সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন, তবুও তার নামে একটি পুরস্কারও নেই। ২০ আগস্ট রণদীপ হুডা আজ তার ৪৬ তম জন্মদিন উদযাপন করছেন। চলুন আজ জেনে নিই অভিনেতার জীবনের সেই কষ্টসাধ্য দিনগুলো।
রেস্তোরাঁয় কাজ করেছেন, এমনকি গাড়ি পরিষ্কার করে উপার্জন করেছেন
রণদীপের বাবা পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার এবং তার মা আশা হুডা একজন সমাজকর্মী। রণদীপেরও একটি বড় বোন এবং ছোট ভাই রয়েছে। বোন আমেরিকায় ডাক্তার আর ভাই সিঙ্গাপুরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। রণদীপের বয়স যখন 8 বছর তখন তার পরিবার তাকে সোনিপতের এমএনএসএস বোর্ডিং স্কুলে পাঠায়।সেখান থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি কয়েক বছর দিল্লিতে বসবাস করেন। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে চলে যান। রণদীপ সেখানে মার্কেটিং এবং মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন, গাড়ি পরিষ্কার করতেন এবং ট্যাক্সি ড্রাইভিং য়ের কাজ করতেন। ২ বছর পর ভারতে ফিরে এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং বিভাগে চাকরি পান।তবে অভিনেতার জীবন তাকে আকর্ষণ করে বদলে যায় জীবনযাত্রা। দামি চাকরি ছেড়ে বেছে নেন এক অনিশ্চিত জীবন।
দ্বিতীয় ছবির জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল
রণদীপ ২০০১ সালে মীরা নায়ারের ছবি ‘মনসুন ওয়েডিং’ মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ছবিটিও বক্স অফিসে ভাল সাড়া পেয়েছিল, কিন্তু এর পরে রণদীপকে তার দ্বিতীয় ছবি পেতে প্রায় ৪ বছর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এদিকে রণদীপ থিয়েটার ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের কাজ করেছেন। অবশেষে, ২০০৫ সালে, রাম গোপাল ভার্মা তাকে আবার কাজ দেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার ছবি ‘ডি’ বেশ নাম করেছিল। দাউদের চরিত্রের উপর ভিত্তি করে এই ছবিটি দিয়ে রণদীপ আবার লাইমলাইটে আসেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বেশ কিছু ভুল ছবি নির্বাচন করে, আবার হারিয়ে যান। একারণে তাকে আবার সংগ্রাম করতে হয়। অবশেষে ২০১০ সালে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’ ছবি দিয়ে আবারও বড়ো পর্দায় কাম ব্যাক করেন।
তিনি টাকা ধার করে কুকুরের মতো নাসির সাহেবের পিছনে যেতেন
দীর্ঘ সংগ্রামের সময়, রণদীপ তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নাসিরুদ্দিন শাহের থিয়েটার গ্রুপ ‘মটলি’-তে যোগ দিয়েছিলেন। রণদীপ নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রথম দিকে নাসির সাহাব আমাকে তার দলে নিতে চাননি, কিন্তু আমি নাসির সাহেবকে কুকুরের মতো অনুসরণ করতাম তার জন্য টাকা ধার করতে হলেও করেছি, দেশের যেখানে-সেখানে ওয়ার্কশপ করতেন আমি সেখানেই ছুটতাম।’ পরবর্তী কালে নাসির সাহেবই রণদীপের প্রতি সর্বাধিক আস্থা দেখিয়েছিলেন এবং তিনি শুধুমাত্র তাঁর অভিনয়কে তীক্ষ্ণ করেননি, চলচ্চিত্রের প্রতি রণদীপের মনোভাবও পরিবর্তন করেছিলেন।
ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’-এরপর, রণদীপ ‘সাহেব বিবি অর গ্যাংস্টার’, ‘জান্নাত ২’, ‘হাইওয়ে’ এবং ‘কিক’-এর মতো অনেক হিট ছবি করেছেন । এই সব ছবির জন্য তিনি বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। ‘হাইওয়ে’ ছবিতে মহাবীর ভাটির চরিত্রে রণদীপ যে উদাহরণ রেখেছিলেন তা মানুষ মনে রাখবে আজীবন। একই সময়ে, ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সরবজিৎ’ ছবিতে রণদীপ তার চরিত্র সরবজিতের অত্যন্ত প্রশংসিত হন,অভিনয়ে যে দক্ষতা ও নিষ্ঠা দেখিয়েছিলেন তা দেখে সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিল। এই ছবির জন্য মাত্র ২৮ দিনে ১৮ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন রণদীপ। ওজন কমার কারণে শ্যুটিং চলাকালীন বেশ কয়েকবার অজ্ঞানও হয়েছিলেন অভিনেতা। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন আয় করতে না পারলেও, রণদীপ তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন এই ছবিতে। স্টারডাস্ট এই ছবির জন্য তাকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এতদিনেও তিন খান যা করতে পারেননি। রণদীপ তা করে দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনটি বায়োপিক তার ঝুলিতে। ২০১৪ সালে রাজা রবি বর্মার উপর ‘রঙ্গরাসিয়া’, ২০১৫ সালে ‘ম্যায় অর চার্লস’ এবং ২০১৫ সালে ‘সর্বজিত’ তিনটি বায়োপিক অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন।শীঘ্রই তাঁকে তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ বায়োপিক ‘স্বতন্ত্র বীর সাভারকার’-এ বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকরের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে।
সুস্মিতা সেনের সঙ্গে ব্রেকআপ
রণদীপ তার পেশাগত জীবনের জন্য যতটা খবরে ছিলেন, ততটাই ব্যক্তিগত জীবনে। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিশ্ব সুন্দরী অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চর্চায় ছিলেন তিনি। দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে ডেট করেছেন। সুস্মিতার সাথে ব্রেকআপের পরে, রণদীপ একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে এই ব্রেক আপটি ছিল তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত কারণ এই ব্রেক আপের পরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে নিজের সময়গুলো অন্যের জন্য নষ্ট করেছেন। রণদীপ অভিনেত্রী নীতু চন্দ্রকে ২-৩ বছর ডেট করেছেন বলে জানা যায়। অদিতি রাও হায়দারি, চিত্রাঙ্গদা সিং এবং লিসা হেডনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও তার নাম জড়িত রয়েছে।
তবে ব্যক্তিগত জীবন নয়, পেশাগত জীবনে রণদীপ একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। আগামী দিনে আরও সুন্দর কাজ তিনি ইন্ড্রাস্ট্রিকে দিতে পারেন। তার জন্য প্রয়োজন কাজের সুযোগ। বলিউডের চাকচিক্যে যেন হারিয়ে না যান।