Pankaj Kumar Mallick: বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মতোই নামডাক, যাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ দুর্গা পুজো, চেনেন এই ব্যাক্তিকে?

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: শরৎ আসলেই মনের মধ্যে বয়তে থাকে এক অন্যরকম হাওয়া। চারিদিকে ছড়িয়ে পরে পুজো পুজো গন্ধ। চার দিনের জন্য স্বর্গ থেকে মা আসবেন ঘরে। আর সেই আশায় সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিরা। তবে পুজোর আগে মহালয়ার থেকে শুরু হয় দেবীপক্ষ। মহালয়া আসলেই পুজো পুজো গন্ধটা যেন আরও বেড়ে যায়। সকাল সকাল উঠে মহালয়ার অনুভূতি অন্যরকম ( Pankaj Kumar Mallick )।
মহালয়া ছাড়া বাঙালির দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ। আর সেটা যদি হয় পঙ্কজ কুমার মল্লিকের ( Pankaj Kumar Mallick ) মহিষাসুরমর্দিনী তাহলে তো কোনও কথায় নেই। ভারতীয় সংগীতের অঙ্গনে দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারিত হয় যার নাম, তিনি হলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। তাঁর কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী এখনও অমর হয়ে আছে। এটা বাঙালির কাছে নিখাদ আবেগ ছাড়া আর কিছু নয়। তবে জানেন এই অমর স্রোস্টার শেষ জীবন কেমন ছিল। কেমন বেদনাদায়ক ভাবে কেটেছিল শিল্পী পঙ্কজ কুমার মল্লিকের দিন গুল।
১৯০৫ এ কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। ছোট থেকে মায়ের উৎসাহে তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছিল গানের প্রতি এক অন্যরকম ভালবাসা। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র দীপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহচর্যে কবিগুরুর গানের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন তিনি ( Pankaj Kumar Mallick )। বলা যায় রবীন্দ্র সংগীতকে সর্ব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পঙ্কজ কুমার মল্লিকের অবদান অনেকটা। কবিগুরুর ইচ্ছা অনুযায়ী তার বেশ কয়েকটি কবিতায় সুরও দিয়েছেন পঙ্কজ।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ভারতের জাতীয় সংগীত জনগণমন প্রথম গেয়ে রেকর্ড করেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক ( Pankaj Kumar Mallick )। ভারতীয় চলচ্চিত্র তথা বাংলা, হিন্দি, তামিল এমনকি উর্দু ভাষাতেও বহু সিনেমায় সুর দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে প্রমথেশ বড়ুয়ার অনুরোধে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। গানের সঙ্গে অভিনয়েও যে তিনি দক্ষ তার প্রমাণ দিয়েছেন তাঁর অভিনীত একের পর এক ছবিতে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে অভিনয়কে কোনদিন তেমনভাবে আমল দেননি পঙ্কজ কুমার মল্লিক।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে তার নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো। তবে এই রেডিওর মধ্যে দিয়ে জীবনের সব থেকে বড় অপমান সহ্য করতে হয়েছিল পঙ্কজ কুমার মল্লিককে ( Pankaj Kumar Mallick )। একবার পঙ্কজকে না জানিয়েই তাঁর মহিষাসুরমর্দিনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শ্রোতাদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ওই বছরই ষষ্ঠীর দিন আবার সম্প্রচারিত হয় তাঁর কন্ঠে তৈরি মহিষাসুরমর্দিনী। তবে আরও এক অপমান তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল যার উল্লেখ তিনি নিজের আত্মজীবনীতা করে গিয়েছেন।
সেই সময় রেডিওতে তিনি মীরাবাইয়ের ভজন শেখাতেন। এমন সময় হঠাৎ একদিন তাঁর নিজের বাড়ির ঠিকানায় এলো একটি চিঠি। চিঠিটি লিখেছেন তৎকালীন বেতার কেন্দ্রের স্টেশন ডিরেক্টর। লেখা ছিল এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর ফলে এক বোবা নির্বাক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে শেষ জীবন কেটেছিল পদ্মশ্রী অর্জন করা এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী পঙ্কজ কুমার মল্লিকের ( Pankaj Kumar Mallick ) শেষ জীবন।