Birendra Krishna Bhadra: “কেউ মনে রাখবে না ভাবতেই পারিনি”, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের এই কাহিনী শুনলে চোখ ভিজবে আপনারও

জয়ীতা সাহা, কলকাতা: আজ শুভ পঞ্চমী। বাঙালির দুর্গা পুজো শুরু হয় যাঁর কন্ঠ শুনে তিনি হলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। মহালয়ার দিন ভোরে বেতারে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে ‘আশ্বিনের শারদ-প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর’ শুনলেই মনে হয় পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা ভারতবর্ষে এমন অনেক কবি, নাট্যকার রয়েছেন যাঁদের অসামান্য কৃতিত্ব থাকলেও তাঁদের শেষ জীবনে প্রায় মনে রাখেনি কেউই। যাঁর কন্ঠ না শুনলে আজও বাঙালির দুর্গোৎসব থেকে যায় অপূর্ণ, জানলে অবাক হবেন শেষ বয়সে কেউই খোঁজ রাখেননি এই অসামান্য ব্যাক্তিত্বকে।
সালটা ১৯০৫ কলকাতার আহিরী তলায় জন্ম হয় কবি তথা নাট্যকার বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের। বাবা রায় বাহাদুর কালী কৃষ্ণ এবং মা সরলাবালা দেবী দেবীর ঘরে জন্ম নেন এই অমর শিল্পী। ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ১৯২৮ সালে স্কটিশচার্য কলেজ থেকে স্নাতক সম্পূর্ণ করেন। ১৪ টি ভাষায় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র দক্ষ ছিলেন। নিম্ন আদালতে তিনি দোভাষীর কাজও করেছেন। ১৯৩০ সালে তিনি বেতার কর্মজীবনে আত্মপ্রকাশ করেন। তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিও অর্থাৎ আজকের আকাশবাণীতে দেবী দুর্গার কল্প কাহিনীর উপর ভিত্তি করে মহিষাসুরমর্দিনী নামে ২ ঘন্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেন। প্রথম দিকে এই অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করা হলেও বেশ কিছু বছর পর থেকে তা রেকর্ডিং সম্প্রচার করা হত। যা আজও আমরা শুনতে পাই। প্রথম দিকে এই অনুষ্ঠান দুর্গা পুজোর ষষ্ঠীর দিন সম্প্রচার করা হলেও পরবর্তীতে মহালয়ার দিন ভোরে সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয় আকাশবাণী। জানলে অবাক হবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের স্থানে একসময় উত্তম কুমারকে দিয়ে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হলেও তা জনপ্রিয়তা পায়নি। পরবর্তীকালে ওই বছরেই আবারও ষষ্ঠীর দিন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ডি সম্প্রচার করা হয় আজকের বেতার সম্প্রচার আকাশবাণীর তরফে। তবে অসামান্য এই ব্যাক্তিত্ব শেষ বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে স্মৃতিশক্তির অবনমন ঘটলে ধীরে ধীরে কাজ বন্ধ করে দেন। সেই সময় বেতার সম্প্রচার থেকে কেউই তাঁর খোঁজ রাখেননি। শেষ বয়সে তিনি একটাই কথা বলতেন “কেউ মনে রাখবে না এটা ভাবতেই পারিনি। তবে আমাকে কেউ মনে না রাখলেও আমার কাজকে মনে রাখতেই হবে।” ১৯৯১ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই শিল্পী। সত্যিই আজ তিনি নেই রয়ে গিয়েছে তাঁর অসাধারণ কন্ঠ, কাজ। ১৯৩০ থেকে আজ পর্যন্ত এত দীর্ঘ সময় ধরে বেতারে একই অনুষ্ঠান এত নতুন করে শোনেন মানুষ। শুধু ভারতেই নয় বিশ্বের সমস্ত বেতার অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে এমন বিরল অনুষ্ঠান বোধহয় এই একটিই রয়েছে এবং থাকবেও।