Uttam Kumar: “আমার নাম গগন সেন…..” জ্বলজ্বলে শেষ সংলাপ! বুকে ব্যাথা নিয়েও শট দিতে ভোলেননি মহানায়ক

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: ‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলত’, মনে পরে সপ্তপদীপ ছবির সেই আইকনিক গানের কথা। নায়ক ( Uttam Kumar ) তাঁর বায়িকের পিছনে নায়িকাকে বসিয়ে গান গায়ছেন। তিনি বলেছিলেন রাস্তার কথা, তবে অন্যভাবে ভাবলে কিন্তু এটাও মনে হয় যদি জীবনের এই পথ শেষ না হয়ে চলতেই থাকে তাহলে কেমন হয়? সত্যি কি সেটা কখনও সম্ভব? একেবারেই না। আজ জীবনের পথ যদি চলতেই থাকত তাহলে আজ জীবিত থাকতেন মহানায়ক।
বর্তমানে সে যতই নতুন নতুন অভিনেতাদের মহানায়ক সম্মানে ভূষিত করা হোকনা কেন, বাঙালির কাছে মহানায়ক মানে একটাই নাম কানে আসে মহানায়ক উত্তম কুমার ( Uttam Kumar )। তিনি বাঙালির ইমোশন, বাঙালির গর্ব। যার কারণে আজ এত বছর পরও নতুন জেনারেশানের ছেলে মেয়েরাও ভালবাসেন তাঁকে। যুগের পর যুগ বাঙালির মনে মহানায়ক হয়েই রয়ে যাবেন তিনি।
কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন,’এ পৃথিবী একবার পায় তাঁরে, পায় নাকো আর।’ তাঁর এই কথাটি প্রমাণিত হয় মহানায়কের ( Uttam Kumar ) মৃত্যুর পর। তারকা চলে গেছিলেন নিঃশব্দে। মৃত্যুর আগে যার আচঁটুকু পায়নি কেউ। নিঃশব্দে হারিয়ে গেলও বাঙালির ভালবাসার সেই মানুষটি। যে বারবার শিখিয়েছে সকলকে বাঁচতে। কেমন কেটে ছিল মহানায়কের মৃত্যুর আগের চব্বিশ ঘণ্টা?
দিনটা ছিল ২৩ জুলাই ১৯৮০। চলছে ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শ্যুটিং। প্রতিদিনের মতো সকাল সকাল পূজো সেরে খাওয়া-দাওয়া করে রওনা দিলেন স্টুডিওর উদ্দেশ্যে। সেদিন সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক অসীম সরকার। মাথায় এক বিশাল চাপ। একদিকে সুপ্রিয়া দেবীর অসুস্থতা, অন্যদিকে হিন্দি ছবি ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ফ্লপ হওয়ায় বাজারে ধার-দেনা বেড়েছে। দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ে না তাঁর। তবে এসবের মধ্যেও ক্যামেরার সামনে আসলেই তিনি এক অন্য মানুষ ( Uttam Kumar )।
সে দিন যেন তাঁর সঙ্গে ঘটছিল অদ্ভুত সব ঘটনা। শ্যুটিং- যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে দেখেন তাঁর বহু পুরনো টেপরেকর্ডারটি উধাও। বুঝলেন সেটা চুরি গেছে। টেপরেকর্ডার হারিয়ে যাওয়ায় যেন বন্ধু বিচ্ছেদের কষ্ট অনুভব করেছিলেন তিনি। স্টুডিওতে গিয়েও মন মরা হয়ে ছিলেন। তবে ক্যামেরার সামনে আসতেই ভিরে আসে এক অন্য উত্তম ( Uttam Kumar )। সেদিনের দৃশ্যটি ছিল সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার। এমতাবস্থায় ঝগড়ার সুরে স্ত্রীকে বললেন, ‘আমিও দেখে নেব, আমার নাম গগণ সেন…..।’
এটিই হয়তো ছিল তাঁর শেষ সংলাপ। এরপর শ্যুটিং থেকে ফিরে নিয়মরক্ষা করতেই ছুটতে হল বন্ধু দেবেশ ঘোষের বাড়ি। বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরতে একটু দেরিই হল তাঁর। রাত বাড়তেই বাড়ল অসুস্থতা। শ্যুটিং ফ্লোরেই অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি ( Uttam Kumar )। কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার অবসর কোথায় তাঁর। এরপর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে আসেন দক্ষিন কলকাতার ‘বেলভিউ’ নার্সিংহোমে। সেখানে পাঁচ জন ডাক্তারের একটি মেডিকেল বোর্ডও বসানো হল তাঁর জন্য। কিন্তু কিছুতেই আর শেষ রক্ষা হল না।
২৪ জুলাই ১৯৮০, ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমার ( Uttam Kumar )। মহানায়কের মৃত্যুর খবর সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করা হয়নি। তবে তা বেশিক্ষণ গোপনও করা যায়নি। ২৫ জুলাই ভোর থেকেই উত্তমকুমারের বাড়ির সামনে ভিড় করে ছিলেন একাধিক মানুষ যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল সাংবাদিক। সবার চোখে একটাই প্রশ্ন, সত্যি কি এবার ইন্দ্রপতন ঘটল? অবশেষে, বাড়ির লোকের অরফ থেকে প্রকাশ করা হল মহানায়কের মৃত্যুর খবর। মুহূর্তের মধ্যেই যেন শোকস্তব্ধ হয়ে গেল সারা কলকাতা। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে শেষ হল একটি যুগের। তবে মহানায়ক আজ সকলের মধ্যে উপস্তিত না থাকলেও বাঙালির মনে রয়ে যাবেন আজীবন।