Tulsi Chakraborty: মনে ভয় ছিল কেউ যদি কাজে না নেয়, অল্প পয়সাতেই কষ্টে জীবন কাটিয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের এই অভিনেতা

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: মানুষ তাঁর কর্মব্যস্তময় জীবনটাকে ঠিক রাখতে মাঝে মধ্যেই খোঁজে তাঁর বিনোদনের উপায়। আর বর্তমানে বিনোদনের সব থেকে সহজ উপায় হলও চলচ্চিত্র। তবে টেলিভিশনের আবির্ভাব হওয়ার আগে যাত্রা পালা, নাটক আর থিয়েটার এই ছিল তাঁদের বিনোদনের রসদ। তবে বেশ কয়েক দশক আগে যখন প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র শুরু হলও সেই থেকে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাস মনে করলেই উঠে আসে একাধিক জনপ্রিয় সব শিল্পীদের কথা। যার মধ্যে সর্বপ্রথম যার নাম উঠে আসে তিনি হলেন তুলসী চক্রবর্তী ( Tulsi Chakraborty )।
পঞ্চাশ দশকের একজন জনপ্রিয় শিল্পী তিনি। টলিউডকে উপহার দিয়েছেন একাধিক সুপারহিট সব সিনেমা। তবে জানেন, এত বড় একজন অভিনেতা হওয়ার পরও টলিউড থেকে কখনও নিজের যোগ্য সন্মান পাননি তিনি ( Tulsi Chakraborty )। তাঁর সেই অনবদ্য অভিনয়ের প্রতিভার জন্য যে পারিশ্রমিকটা তাঁকে দেওয়া হতো তা ছিলও খুবই নগণ্য। নিজেও কখনও নিজের মূল্যটুকু বুঝতে পারেনি, তুলসী চক্রবর্তী। সারা জীবন অভিনয় করেও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রীকে কাটাতে হয়েছিল অর্থ সংকটে।
১৮৯৩ সালে লিজেন্ডারি এই শিল্পী তুলসী চক্রবর্তীর। জীবনের প্রথম দিন থেকেই চরম দারিদ্রতার মধ্যে কেটেছিল তাঁর। প্রথমেই সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ হয়নি তাঁর। ছবিতে কাজ করবার আগে যাত্রা পালা এবং নাটকে কাজ করতেন। সেখানেই প্রথম নিজের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে সুনাম কিনেছিলেন তিনি ( Tulsi Chakraborty )। এরপর ১৯৩২ সালে মুক্তি পেয়েছিল তুলসী চক্রবর্তী অভিনীত প্রথম ছবি “পুনর্জন্ম”। পঞ্চাশের দশকেই প্রায় পর পর ১১ থেকে ১২ ছবি মুক্তি পেয়েছিল তাঁর।
পর পর সুপারহিট সব ছবিতে অভিনয় করেও দারিদ্রতা কাটেনি তাঁর। আজীবন ট্রামে বাসে চড়ে যাতায়াত করতেন স্টুডিও পাড়াতে ( Tulsi Chakraborty )। আসলে তাঁর নিজের মধ্যেও সব সময় একটা ভয় কাজ করত, যদি পারিশ্রমিক বাড়ালে তাঁকে আর কেউ কাজে না নেয়। নিজের প্রতিভাবে চিনতে ভুল করেন তিনি।আর সেই সুযোগগুলোই নিত তখনকার পরিচালকরা, কম পারিশ্রমিকে তুলসী চক্রবর্তী মত একজন অভিনেতাকে কাজ করিয়ে নেওয়া হতো একের পর এক সিনেমাতে।
কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে যখন অন্য পরিচালকরা তাঁর ( Tulsi Chakraborty ) সুযোগের ব্যবহার করছিল তখনই বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই অভিনেতার কদর করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তুলসী চক্রবর্তী ঠিক কী জাতের অভিনেতা। জোহুরীর চোখ চিনতে পেরেছিল আসল হিড়েকে। তাই তিনি তাঁর পরশপাথর ছবিতে অভিনয় করার জন্য অনেকটাই বাড়িয়েছিলেন তুলসী চক্রবর্তীর পারিশ্রমিক। সেই পারিশ্রমিক শুনে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী।
তাঁর কান্না দেখে বেশ বিব্রত হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার কারণ তিনি নিজেও জানতেন যে তিনি যে পারিশ্রমিক টুকু এই মানুষটাকে দিচ্ছেন সেটি তাঁর অভিনয়ের কাছে অনেকটাই কম। কিন্তু তারপরও এত বড় মাপের একজন অভিনেতাকে কখনই কদর করেনি টলিউড। আজও পর্যন্ত একটা জাতীয় পুরস্কার তো দূর একটা পদ্ম পুরস্কার জোটেনি অভিনেতার। শোনা যায়, তুলসী চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রীকে লোকের দরজায় দরজায় ভিক্ষা করে কাটাতে হত। তবে সেই সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।