St. Xavier’s college:”সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকিনির ঝড়!” ‘মেয়েদের শরীর,মেয়েদের অধিকার’ দাবি বিদীপ্তা, রত্নাবলীদের

যখন সমাজ বদলের ডাক আসে তখন তা ঝড়ের গতিতেই আসে। বদল ঘটুক বা না ঘটুক, শিকড় থেকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। আর এবার সেই সমাজ বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠল বিকিনি। সেন্ট জেভিয়ার্সের অধ্যাপিকার পাঁচটি ছবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর তারপরেই নোটিশ দিয়ে বরখাস্ত করা হয়। সমাজের নীচু স্তরে পোশাক বিতর্ক স্থান পেত এতদিন। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন পোশাক নির্ধারণের দায় নিজের কাঁধে তুলে নেয় তখন জমে থাকা বারুদে অগ্নিসংযোগ হতে বেশি সময় লাগে না। এখন বিকিনি বিদ্রোহ ক্রমশই জোটবদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষিকা থেকে সমাজ কর্মী, চাকুরিজীবী, ডাক্তার, অভিনেত্রী কে নেই এই তালিকায়! সকলেই নিজেদের সুইম স্যুট, টু পিস, বিকিনি, ক্লিভেজ সহ একাধিক ছবি পোস্ট করছেন। না,সখে নয়। প্রতিবাদের মাধ্যম হয়ে উঠেছে আজ ছবিগুলি।
বুধবার ফেসবুকে নিজের সুইমস্যুট পরা ছবি দিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করেন রত্নাবলী রায়। মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী তিনি। স্যুইমস্যুট পরা নিজের ছবিটি দিয়ে পোস্টে লেখেন, ‘কাঁচকলা। কাঁচকলা। ব্যক্তি শিক্ষকের পোশাক ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিড়ম্বনার বিষয় হয় না, এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি। যে কর্তৃপক্ষ এই কথা বোঝেন না, তাঁদের শিক্ষার পরিধি বাড়ানো দরকার। তিনি সকলকেই অনুরোধ করেন, তারাও যেন নিজেদের ইচ্ছামতো সুইমস্যুট পরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। তিনি আরও বলেন ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’ হ্যাসটাগ আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ুক। আর এরপর ঘটে তাই। এই আন্দোলনে সামিল হন মনোবিদ পয়োষ্ণি মিত্র (Payoshni Mitra), প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী এসএফআই নেত্রী অনিশা পাল (Anisha Pal), অভিনেতা বিদীপ্তা চক্রবর্তী (Bidipta Chakraborty) প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা।
মনোবিদ পয়োষ্ণি মিত্র তাঁর মা ও মেয়ের সঙ্গে সমুদ্রস্নানের একটি ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘স্যুইম স্যুটে আমরা তিন প্রজন্ম। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিজেদের ছবি পোস্ট করতে ভালোবাসি!’ একইসঙ্গে রত্নাবলী রায়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি। তিন প্রজন্মের কতটা উন্নত ধ্যান ধারণা তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেকেই। অভিনেত্রী বিদিপ্তা চক্রবর্তী ও তার বড় মেয়ে মেখলা দাশগুপ্ত একটি সুইমিং কস্টিউম পড়া ছবি দিয়ে বলেন, ‘মাই বডি মাই রাইটস’ অর্থাৎ আমার শরীর আমারই অধিকার। শেষে সেই হ্রাস ট্যাগ ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’। তালিকায় নাম লেখান প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী তথা একদা এসএফআই নেত্রী অনিশা পাল। ফ্রেঞ্চ কবি হেলেন সেক্সাসের কয়েকটি লাইন উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘শরীরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে দমবন্ধ হয়ে আসে,বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। নিজের হয়ে কথা বলুন যাতে আপনার শরীরও শুনতে পায়।” তারপর তিনি রত্নাবলী রায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, এই বার্তাটি স্পষ্ট করে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।শেষে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনিও লিখেছেন ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স।
শুধু সমাজের স্বনামধন্য ব্যক্তি নয়, এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। মেয়েরা যে আর চুপ করে থাকবে না, সমাজের লিখে দেওয়া পরিশীলিত চিরাচরিত পোশাকের ধারণায় বদল আনবেই সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। তবে শুধু
মহিলা নয়, পুরুষরাও সামিল এই লড়াইয়ে। চারিদিকে উঠেছে নিন্দার ঝড়। ট্রোলিংয়ে ছেয়ে গেছে নেট মাধ্যম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যতই আধুনিক হোক, তার গোঁড়ামির অচলায়তন ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে নারী সমাজ।