“যেন অবিকল মানিকদা-ই!” অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’-তে জিতুর প্রথম লুকে অবাক দর্শক মহল
গত দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক করছে সাদা-কালো ফ্রেমে ‘মানিকদা’র কয়েকটি ছবি। নেটিজেনদের অনেকেই প্রথমে এটি ‘মানিকবাবু’র ছবি অনুমান করলেও বাস্তবে এটি টেলিভিশন অভিনেতা জিতু কামালের ছবি। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে তাঁরই ছত্রছায়ায় ছবি তৈরি করতে চলেছেন পরিচালক অনীক দত্ত।
ছবির ঘোষণা করেছিলেন অনেকদিন আগেই। তবে বুধবার প্রকাশ্যে আসে এই ছবির কিছু দৃশ্য এবং সেখানে অপরাজিত-এর চরিত্রে জিতুকে দেখে চক্ষু চড়কগাছ নেটনাগরিকদের। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ তৈরী হওয়ার নেপথ্যের কাহিনীকে তুলে ধরা হবে অনীক দত্তের ছবিতে। জিতু কামাল ছাড়াও এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের “জয়া-বিজয়া রায়”-এর অনুরূপ ভূমিকা বইমেলা রায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। অপরাজিত রায়ের চরিত্রে প্রথমে অভিনয়ের কথা ছিল আবির চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু পরে বেশ কিছু সমস্যার জন্য পরিচালক টেলিভিশন খ্যাত অভিনেতা জিতু কামালকে কাস্টিং করেন। বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুন্ডুর ছোঁয়ায় জিতু “যেন অবিকল মানিকদা-ই!” সেই একই রকম চোখের চাহনি, সেই স্টাইল, সেই কথা বলার ধরন, সেই সিগারেট ধরার কায়দা – হুবহু সত্যজিত রায়ই হয়ে উঠেছেন জিতু।
তবে পরিচালক অনীক দত্ত বলেন, ” এই ছবির বিষয়ে বাবুর(সন্দীপ রায়) সঙ্গে আমার আগেই আলোচনা হয়েছিল।তবে এটিকে সত্যজিৎ রায়ের বায়োপিক ভেবে ভুল করবেন না। এটি কোনোভাবেই ওনার বায়োপিক না। সত্যজিৎ রায়ের জীবনের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। আমার ছবির মুখ্য ভূমিকার নাম অপরাজিত রায়। একটা রেফারেন্স রায়বাবুর সঙ্গে নিশ্চয়ই আছে। তবে ‘পথের পাঁচালী’ তৈরী হওয়ার নেপথ্যের গল্প বলার পাশাপাশি এটি একটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ করার গল্পকেও তুলে ধরবে। এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক সিনেমা।”
এই ছবিতে ‘পথের পদাবলী’ নামক একটি ছবি তৈরী করার স্বপ্ন দেখে অপু, এটিই তাঁর জীবনের প্রথম ছবি নির্মাণ। এরপর অজস্র সংগ্রাম পেরিয়ে প্রায় তিন বছর পর সে তৈরী করে এই ছবিটি। তারপরেই আসতে থাকে সাফল্য, ভরতে থাকে পুরস্কারের ঝুলি। গল্প প্রসঙ্গে কথা বলার সময় পরিচালক জানিয়েছেন, ” সত্যজিৎ রায় বরাবরই অন্য ধারার ছবি করতে চাইতেন। সেই সময়ে পঞ্চাশের দশকে যে সমস্ত কলকাতা বা মুম্বাইতে যে ছবিগুলি হচ্ছিল, সেগুলি তার বিশেষ পছন্দ হতো না। শাস্ত্রীয় সংগীত,চলচ্চিত্র সঙ্গীত সব মিলিয়ে একদমই অন্য ধারার বাংলা চলচ্চিত্র তৈরী করার জন্য আগ্রহী ছিলেন তিনি। আমি আমার ছবিতে অপরাজিত বা অপুর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছি, যদি আপনি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে আপনার স্বপ্ন সত্যি করার ক্ষমতা আপনার আছে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।”
আরও পড়ুন……..জাঁকিয়ে শীতের পথে বাঁধা হতে পারে বৃষ্টি, সপ্তাহান্তে বৃষ্টিপাতের ভ্রুকুটি
ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে দর্শকমহল সব জায়গা থেকেই অনেক প্রশংসা পেয়েছেন পরিচালক। জিতুর লুক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিতু যখন লুক টেস্টের দিন মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ওকে দেখে অবিকল সত্যজিৎ রায়ই মনে করেছিল মেকাপ রুমের সবাই। সামান্য প্রস্থেটিকের ব্যবহার করে অসামান্য কাজ করেছে সোমনাথ কুণ্ডু। আর জিতুকে আমি এর আগে কিছু পুরোনো ছবি দেখিয়ে ছিলাম শুধু। ও নিজের মতন কিছু গবেষণা করেছিল। খুব তাড়াতাড়ি যে কোনো কাজ ধরে ফেলতে পারে।” পরিচালকের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী জিতুর এই লুকের ছবি দেখে প্রথমে সত্যজিত রায়ের ছবিই ভেবেছিলেন। এমনকি সত্যজিতের সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন এক শিশুশিল্পীও জিতুকে দেখে অবিকল সত্যজিৎ রায় ভেবে অবাক হয়েছেন। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে জিতুর এই লোক নিয়ে বেশ প্রশংসা করেছে অডিয়েন্স।
ছবির প্রথম অংশের শুটিং শেষ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই, বীরভূমে শ্যুট করা হয়েছে ছবির এই অংশের দৃশ্যগুলি। ছবির বাকি অংশের শুটিং শুরু হবে ১৯ নভেম্বর থেকে। এই দৃশ্যগুলো শুট করা হবে কলকাতার শিশির মঞ্চ, নন্দন ও বিভিন্ন এলাকায়। অনীক দত্তের পরিচালনায়, ফিরদৌসুল হাসান ও প্রবাল হালদারের নিবেদনে এবং ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের ব্যানারে সামনের বছরেই আসতে চলেছে এই ছবি। ইতিমধ্যেই দর্শকমহলের উত্তেজনা দেখে বোঝাই যাচ্ছে বাঙালী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে এই অভিনব সৃষ্টির।