Gita Dey: ছিলেন অনস্ক্রিন দজ্জাল শাশুড়ি, মনে পড়ে টিভি পর্দা থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই গীতা দে’কে?

প্রত্যুষা সরকার, কলকাতা: টলিউডের প্রবীণ অভিনেত্রী গীতা দে। একাধিক বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে প্রতিটি ছবিতেই নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেই মন জয় করেছেন বাংলা সিনেমপ্রেমী সকল মানুষের। কিন্তু পর্দায় যতটা কুচুটে ছিলেন বাস্তব জীবনে ছিলেন একেবারেই উল্টো। একেবারেই দয়ার সাগর ছিলেন তিনি। তবে এত ভাল একজন অভিনেত্রী শেষ বেলায় টলিউড ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাননি কোনও যোগ্য সম্মান।
অভিনয়ের পাশাপাশি ভাল গানও গাইতেন অভিনেত্রী। মেয়ের এমন গান ও অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা দেখে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নিতে পাঠান বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র। তাঁর জীবনের নাচ, গান, অভিনয়ের শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি হয় রাধারানী দেবীর কাছেই। এরপরই মাত্র ৬ বছর থেকে শুরু হয় তাঁর সিনেমায় ও থিয়েটারে অভিনয়। টানা ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এরপরই মাত্র ১৫ বছর বয়সে অসীমকুমার দে’র সঙ্গে বিয়ে হয় গীতা দে’র। আর বন্ধ হয়ে যায় তাঁর অভিনয় করা। কিন্তু আবারও বিয়ের পাঁচ বছর পর অভিনয় জগতে ফিরে আসেন তিনি। এরপর থেকে এবের পর এক ছবিতে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী গীতা দে। নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলেও জনপ্রিয়তাও ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। টলিউডের জনপ্রিয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ভানু বন্দোপাধ্যায় নিজের আত্মজীবনীতে তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন।
সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘গীতা দে ভীষণ শক্তিশালী অভিনেত্রী। ও ভালো গানও জানে।’ খুব ছোটবেলায় ‘শ্রীরঙ্গম’ দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয় গীতা দে’র। এরপর সেই সময়ে প্রখ্যাত পরিচালক শিশিরকুমার ভাদুড়ির সংস্পর্শে আসেন তিনি। জ্ঞানেশ মুখার্জি, শম্ভু মিত্র, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, তুলসী লাহিড়ী ও দিলীপ রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে করেছেন গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয়।
এমনকি ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’; সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’, ‘সমাপ্তি’ এবং দেবকীকুমার বসুর ‘সাগর সঙ্গমে’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন সেই সময়কার শক্তিশালী অভিনেত্রী গীতা দে। তাঁর একাধিক ছবি গুলির মধ্যে কয়েকটি ছবি হল, ‘নৌকাডুবি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘মাল্যদান’, অরবিন্দ মুখার্জির ‘নিশিপদ্ম’, ‘দুই ভাই’, ‘মৌচাক’ তপন সিংহের ‘হাটেবাজারে’, ‘জতুগৃহ’র মতো আরও নানা হিট ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রতিভা দেখা গিয়েছে।
তবে পর্দায় তিনি যতই কুচুটে, দজ্জাল, রাগী, মুখরা মনোভাবের মানুষ হিসেবে তাঁকে দেখা যাক না কেনও ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন একদমই উল্টো। ভিলেন হন না কেন, বাস্তবে অত্যন্ত স্নেহশীল, সংবেদনশীল একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা ও চিত্র পরিচালক লরেন্স অলিভার। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অবদান মনে রাখার মত।