Rituparno Ghosh: কলম থেকে চুইয়ে পড়া কালি হয়েছিল ফ্রেমবন্দি, ঋতুপর্ণর হাত ধরেই নব্য রূপ পেয়েছিল ‘চোখের বালি’

রবিঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস ‘চোখের বালি’র নবজন্ম ঘটেছিল অমর চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের হাতে। ‘চোখের বালি’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে আর ঠিক এক শতাব্দী পর ২০০৩ এ চলচ্চিত্রের পুননির্মাণ করলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। একসময় সমালোচনা চর্চা যেমন হয়েছিল, তেমনি ব্যবসা সফল হয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি। বাঙালি কেন এই চলচ্চিত্র নিয়ে এত সমালোচনা মুখর তারই উত্তর খুঁজব আজ ঋতুর আরও এক জন্মদিনে। ঋতুপর্ণের আগেও চোখের বালি নিয়ে চলচ্চিত্রের কাজ হয়েছে, কিন্তু বাঙালি কি এমন খুঁজে পেল ঋতুপর্ণের চোখের বালিতে? আসলে শত বছরের ব্যবধানে নারীর বদল ও চিন্তনের বদল যে কতখানি ব্যবধানে ঘটছে তার এক সূক্ষ্ম সূত্র পাওয়া যায় এই ধারাবাহিকে।
‘চোখের বালি’র গল্প জানে না এমন বাঙালির সংখ্যা খুব স্বল্প। তাই নতুন করে সেই ব্যাখায় না গিয়ে আসুন খুঁজে নিই একজন যুগসফল চলচ্চিত্র নির্মাতার মস্তিষ্ক প্রসূত নতুনত্বের ঝলক। ‘অসুখ’ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্র কবিতার ব্যবহার, বাড়িওয়ালি’ শ্যুটিংয়ের জন্য বনলতায় রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ ভাড়া নেওয়া থেকেই চোখের বালির মানসিক প্রস্তুতি শুরু। রবীন্দ্রনাথ যে সময়ে দাঁড়িয়ে একজন বিধবা নারীর মনোবিশ্লেষণের ছবি এঁকেছিলেন তা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু একশো বছরের ব্যবধানে ঋতুপর্ণ পেয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা। তাই ঋতুপর্ণের বিনোদিনী অনেক বেশি “বোল্ড অ্যান্ড ব্রাইট”। একেবারে সমাজের তৎকালীন ক্ষত চিহ্নে হাত দিয়ে সরাসরি কাটাছেঁড়া করেছেন তিনি। কখনও সধবা আশালতার প্রতি স্বামী সুখের প্রতি জিঘাংসা, কখনও বন্ধুত্বের আবেদন, কখনও বিহারীলালের ব্যক্তিত্বের পূজারী হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার চেষ্টা, আবার মহেন্দ্রর সৌভাগ্য ও মোহ থেকে যৌন আকর্ষণকে উপেক্ষা করতে না পারা, একটি চরিত্রের বিভিন্ন স্তর এত নিঁখুত ভাবে দেখানো হয়েছে যে তা প্রশংসার দাবি রাখে।
চোখের বালির চিত্র গ্রহণ থেকে রঙের ব্যবহার, সাজ পোশাকের বৈচিত্র্য, অলঙ্কার জৌলুস, আভিজাত্যের জন্য বিলাতি সাজের রুচিসম্মত সাজসজ্জা, বলিউড তারকার উপস্থিতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে উচ্চ মার্গীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে এক অনন্য রূপ দান করা একমাত্র ঋতুপর্ণের পক্ষেই সম্ভব। জৌলুসের মাঝে বিধবার অন্তর্বেদনাকে প্রকাশ করতে তিনি ভোলেননি। আবার যৌনতা যে একরকম শিল্প, তার আবেদনময়ী নারী চরিত্র ও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিমার্ণে প্রমাণ দিয়েছেন। প্রতিটি দৃশ্যকে অর্থপূর্ণ করে নিঁখুত নিমার্ণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সাদা-কালো সাদামাটা নারীর যন্ত্রণার ইতিহাসকে উচ্চ রঙের ব্যবহার করে অমলিন করে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সর্বকালের সেরা সিনেমার তালিকায় স্থান দিয়েছেন তিনিই ঋতুপর্ণ ঘোষ।