Molina Devi: খিদের তাড়নায় অভিনয়ে পা! শাড়ি-ঘোমটার যুগে ক্যামেরার সামনে পোশাক খুলেছিলেন এই বাঙালি অভিনেত্রী

যুগ বদলেছে। বর্তমানে অভিনেত্রীরা ব্যক্তিগত জীবনে খোলামেলা পোশাকেই বেশি স্বচ্ছন্দ। সাহসী পরিচয় ক্যামেরার মুখোমুখি হতে দ্বিধা নেই কারওই। কয়েক দশক পেছিয়ে গেলেই ছবিটা একেবারে আলাদা। পরনে শাড়ি, সাবেকি সাজ তাতেই নায়িকারা বাজিমাৎ করতেন সাদা-কালো পর্দায়। কিন্তু সেযুগে কী ব্যতিক্রম ছিল না? হ্যাঁ, সাহসী পোশাক পরে ক্যামেরার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সংখ্যাটা ছিল হাতেগোনা। সাহসীকতা র নিরিখে সেযুগেও অনেক এগিয়ে ছিলেন মলিনা দেবী। কে এই মলিনা দেবী?স্বর্ণযুগের ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তুলসী চক্রবর্তীর বিপরীতে দাপুটে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
হাওড়ার অধিবাসী মলিনা দেবী মাত্র ৮ বছর বয়সে অভাবের তাড়নায় অভিনয় আসেন। প্রথমে নির্বাক চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয়। তারপর সখী দলে নাচের দৃশ্য, ভীড়ের দৃশ্য অভিনয় করতেন। তবে এমন ভাবে উপার্জনে ভাটা পড়েছিল। টলি পাড়ার মূল স্রোতে আসার জন্য অনেক কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রথম সিঁকে ছেড়ে রাধা ফ্লিমসের নির্বাক ছবি ‘শ্রীকান্ত’। তারাকুমার ভাদুড়ীর পরিচালনায়, গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের বাবার বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর বঙ্কিম উপন্যাস অবলম্বনে ‘দেবী চৌধুরানী’। এরপর আন্তর্জাতিক ফ্লিম প্রতিযোগিতায় চাষার মেয়ে ছবিতে অভিনয়। এই অভিনয় এনে দিয়েছিল সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
নিউ থিয়েটার্সের প্রাণপুরুষ ধীরেন্দ্রনাথ সরকার তাঁর নাটক দলে মাস মাহিনাতে নিয়োগ করলেন মলিনা দেবীকে। এসময় অভিনয় জীবনে এল ব্যাপক বদল। রায়চাঁদ বড়ালের কাছে গানের তালিম, অমর মল্লিকের কাছে অভিনয় শিক্ষা, আর উর্দু শিখলেন আজকার হোসেনের কাছে। প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর চিরকুমার সভার নির্মলা চরিত্রে অভিনয়ে দাগ কাটলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর চাহিদা বাড়ল। হিন্দি ও উর্দু ছবিও বাদ পড়ল না।প্রায় ২০০ টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন।মিনার্ভা থিয়েটারে ‘কিন্নরী’, ‘মিশরকুমারী’ বিবিধ নাটকের পরে একসময় মনমোহন থিয়েটারে বালকচরিত্রে অভিনয় করতে আরম্ভ করেন। জাহাঙ্গীর নাটকে তিনি সাজেন বালক দারা শিকোহ (১৯২৯)। এর কিছুদিন পরে তাকে পুনরায় নৃত্যশিল্পী রূপে মঞ্চে দেখা যায়। অভিনেত্রীর পোশাক, চরিত্রের ছুঁৎমার্গ ছিল না। দেবকী বসু পরিচালিত ‘দুলালী বিবি’ ছবিতে পশ্চিমী পোশাকে স্বচ্ছন্দে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। সেযুগের তামাম জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের সাহসিকতাকে প্রশ্ন তুলে দেয় এই ছবি। নিজের মাটি তৈরিতে যাকে রাত ভোর সখী দলে হাত ঘুরিয়ে নাচতে হয়েছে। ভাত জোগাড় করতে যাকে টলি পাড়ার আনাচে কানাচে পড়ে থাকতে তিনি জেনেছিলেন অভিনয়ে কোন দ্বিধা থাকতে নেই। তবে ১৯৫৩ সালের “সাড়ে চুয়াত্তর” ছবি মলিনা দেবীকে দর্শক হৃদয়ে অমরত্ব দান করেছে।