Priyanka Sarkar: ভুল করেছি, আফসোস করি! ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’র সাফল্যই বিষের মতো হয়ে উঠেছিল প্রিয়াঙ্কার জীবনে

বাঙালি ভীষণ নস্টালজিক। তাই আধুনিক সিনেমার পাশাপাশি লেগে থাকে কিছু পুরানো সিনেমার অমলিন স্মৃতি। সালটা ২০০৮। রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) পরিচালনা করছেন ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ দুই কিশোর কিশোরীর প্রেমের ছবি। এই ছবির হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা (Rahul Arunoday Banerjee-Priyanka Sarkar) নামের এক নবাগত জুটি।
বক্স অফিসে উপচে পড়েছিল ছবির ভাঁড়ার। বাঙালি তরুণরা তখন প্রেমের আগুনে ফুটছে। দিন কাল ছিল একেবারে আলাদা। আবেগ প্রবণ তরুণ তরুণীরা কিছু না ভেবেই তখন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন। এই ছবি দেখে চোখের জলে ভেসেছিল গোটা সিনেমাহল। দরিদ্র মেক্যানিক কৃষ্ণের সঙ্গে বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে পল্লবীর আখ্যান জায়গা করে নিয়েছিল দর্শক-মনে। ছবির সঙ্গেই হিট নায়ক-নায়িকার রসায়ন। পর্দার সেই প্রেম গড়িয়েছিল বাস্তবেও। বিয়ে করেছিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু হঠাৎই ছন্দ-পতন ঘটেছিল। আর তারপর হঠাৎ ই ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু কেন হারিয়ে গেলেন অভিনেত্রী? কামব্যাক করা কতটা কঠিন ছিল সেই নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।
ঢের আফসোস রয়েছে নায়িকা প্রিয়াঙ্কার মনে। কি বলেন প্রিয়াঙ্কা? নায়িকা তখন অষ্টাদশী। প্রথমদিকের সিনেমাতেই চূড়ান্ত সাফল্য।সিনেমার প্রেমকে দেখে টলে গেলেন নিজেই। আর সেই নিয়েই আফসোস অভিনেত্রীর,”যখন কেউ ‘ চিরদিনই তুমি যে আমার’ নিয়ে কথা বলেন তখন আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু যে পরিমাণ সাফল্য আমায় এই সিনেমা দিয়েছিল আমি তা ধরে রাখতে পারিনি। আমার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হঠাৎই উধাও হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার বাবা-মা যে পরিশ্রম করেছিলেন তাও আমি ধুলিসাৎ করে দিয়েছিলাম। এখন মনে হয় আরও ম্যাচিওর হয়ে অভিনয় আসা উচিত ছিল। এখন আমি সেই ম্যাচিওরিটি নিয়ে ফিরে এসেছি।এটা অনেক বেশি সুন্দর।” সেসময় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা, দীর্ঘদিন অন্তরিত হয়ে গিয়েছিলেন পর্দা থেকে। পুত্রসন্তানের মা-বাবাও হয়েছিলেন তাঁরা। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও কয়েক বছরের মধ্যে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা। এখনও যদিও খাতায়-কলমে বিচ্ছেদ হয়নি তাঁদের। তবে বনিবনা বিশেষ নেই। অনেক কষ্টে পুনরায় নিজেকে প্রমাণ করেছেন নায়িকা।এখন একাধিক সিনেমা ও সিরিজের মুখ হয়ে উঠছেন তিনি।
নিজের ছোট্টো ছেলেকে নিয়েও ভীষণভাবে চিন্তিত থাকেন নায়িকা। কিছুতেই চান না তার শৈশব নষ্ট হোক। ম্যাচিওরিটি আসার আগে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাননা অভিনেত্রী। প্রিয়আঙ্কা বলেন,”আরও বড় হয়ে অভিনয়ে আসাটাই ভাল। নইলে ছেলেবেলা নষ্ট হয়ে যায়।” নিজের ছোটবেলা কথা মনে পরে যায় অভিনেত্রীর।তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘’১২ বছর বয়স থেকে অভিনয়ে। আমি জানি এর কষ্ট। সহজ তো অভিনয় করবে বলে লাফাচ্ছে। ও বোঝে না, গরমে শ্যুট করা কত কষ্টের! ব্যক্তিগত জীবন বলেই কিছু থাকবে না আর। স্কুলে যেতে পারবে না নিয়মিত। রাস্তায় বেরোলেই সবাই ছেঁকে ধরবে। স্কুলে বন্ধুরা সারা ক্ষণ শ্যুটিংয়ের গল্প শুনতে চাইবে। এখনই ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে অনেকে সেলফি তুলতে চান! প্রিয়াঙ্কার ছেলে হিসেবে। আবাসনের অনেকে জানিয়েছেন। এটা কি খুব নিরাপদ ওর পক্ষে? মা হয়ে এ সব কী করে মেনে নিই! অভিনয়ে আসতে চাইলে বাধা দেব না। ওটা ওর রক্তে। তবু বড় হয়ে যেন আসে। এখন তো স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সহজ ভাবে মিলেমিশে বড় হয়ে ওঠার বয়স সহজের।’’ মা হয়ে যে ভুল করেছেন, পুত্রের জীবনে তার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে চান না।