Uttam Kumar: “পায়ে শিকল বেঁধে রাখুন….” অভিনয় করতে গিয়ে নিজের দেহ নিয়ে এ কী শুনতে হয়েছিল মহানায়ককে?

অহেলিকা দও, কলকাতা : বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন উত্তম কুমার ( Uttam Kumar )। তিনি অভিনয়ের দ্বারা জীবন্ত মানুষকে ফুটিয়ে তুলতেন। তাঁর অভিনয়ের দক্ষতার কোন তুলনা হয় না। তবে শুটিংয়ের সেটে সবারই কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা থাকে। উত্তম কুমার শুটিংয়ের সময় এক নোংরা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। উত্তম কুমারের ভাই তরুণ কুমার স্টুডিওর প্রথম দিকে অভিনয়ের এই নোংরা অভিজ্ঞতা সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন।

এক ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয়। খুব দুরুদুরু বুকে উত্তম কুমার পা রাখলেন স্টুডিওর বুকে। পরিচালক তাকে শট বুঝিয়ে দিলেন। চারিদিকে জ্বলে উঠল আলো। এই প্রথম অভিনেতা দেখলেন তাঁর সামনে অভিনেত্রী প্রভা দেবী। পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলেন, “এ কলীর বীরকে কোথা থেকে আনলেন? পায়ে শিকল বেঁধে রাখুন নইলে যে ঝড় উঠলে উড়ে যাবে। তখন উত্তম কুমার প্রচন্ড রোগা ছিলেন। প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলেন শুটিং দেখতে আসা লোকজনের সামনে। তবু গায়ে মাখলেন না কিছু।

uttam kumar

পরিচালক স্টার্ট বলার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গেলেন নায়িকার দিকে। কিন্তু পরিচালকের অ্যাকশন বলার আগেই প্রভা দেবী উত্তম কুমারের হাতটা ধরে বললেন, “আরে এই ছেলে আমার ডাক্তারি পরীক্ষা করবে কি? ওর নিজেরই তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। চারপাশ থেকে সবাই হেসে উঠল। পরিচালক আর সেদিন দৃশ্যটি সেদিন ধারণ করেননি।

অবশ্য এসব কিছুই আশাবাদী হয়েছে উত্তম কুমারের জন্য। একের পর এক ফ্লপ ছবি, পারিবারিক চাপ সবকিছু মিলিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ১৯৫১ সালে উত্তম কুমার তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি রাজেন চৌধুরীর পরিচালনায় ‘ওরে যাত্রী’। এরপরই উত্তম কুমারের ছবি সহযাত্রী, নায়িকা ছিলেন ভারতী দেবী। এই ছবিটি উত্তম কুমারের জীবনের সক্রিয়তার প্রথম স্বাক্ষর।

uttam kumar

সহযাত্রী দর্শকের মনে বেশ খানিকটা জায়গা করে নিয়েছিল। পরের পাঁচ বছর পাল্টে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের রূপ। একে একে উত্তম কুমার অভিনয় করলেন হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা ইত্যাদি বেশ কিছু ছবিতে। নিজেকে প্রতিবারই বদলেছেন তিনি। বদলে যায় তাঁর অভিনয়।

জীবনের পরন্ত সময়ের দিকে শুটিংয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে তাঁর প্রিয় টেপ রেকর্ডটি চুরি হয়ে যায়। এতে অনেকটাই ভেঙে পরেন তিনি। প্রিয়জন হারানোর থেকেও বেশি আঘাত পেয়েছেন এই টেপ রেকর্ডটি চুরি যাওয়ায়। উত্তম কুমারের জীবনের এই ভাঙা গড়ার খেলায় এই টেপ রেকর্ডারটির অসীম গুরুত্ব ছিল। শুটিংয়ের শেষে তিনি নিয়মিত টেপ রেকর্ডারটির সামনে নিজেকে মেলে ধরতেন। ১৯৮০ সালে ২৪ জুলাই তিনি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের স্মৃতিতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।




Back to top button