SONARI BAGRI: রাতারাতি মন্দির হয়ে উঠল স্কুল, পাকিস্তানি মহিলার কীর্তিতে পড়েছে সাড়া

পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদের ফালি এলাকার গফুর শাহ কলোনিতে প্রায়শই ছেলে-মেয়েদের কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা যায়। মন্দির মূলত উপাসনালয়, তবে পাকিস্তানের সোনারী বাগরি ধীরে ধীরে নিজের অদম্য চেষ্টায় বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে তুলেছেন এই মন্দিরকেই। সোনারী বাগরি হলেন সিন্ধুর বাগরি উপজাতির অন্তর্গত। এই উপজাতির মানুষদের মধ্যে শিক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নারীসহ এই উপজাতির বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ বা খণ্ডকালীন পেশায় নিয়োজিত।
সোনারী বাগরি তার পরিবারের প্রথম এবং বংশের কয়েকজন মহিলার মধ্যে অন্যতম একজন, যিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ওই মন্দির প্রাঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা ও উদ্যমে সাথে শিশুদের শিক্ষাদানের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। সোনারী চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়েই খেয়াল করেন তার বংশের প্রায় ছেলেমেয়েরাই লেখাপড়া করলেও, তার এলাকার সবাই লেখাপড়া করত না। সেই ছোটবেলাতেই সোনারী নিজের এলাকার বাগরি উপজাতির সব বাচ্চাদের পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সোনারী হায়দ্রাবাদের হুসেনাবাদ এলাকার হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি ২০০৪ সালে বিয়ের পর ফালি নাহারের কলোনিতে চলে আসেন। বিয়ের পর সংসারের খরচ চালাতে স্বামীর সঙ্গে কাজ করতেন সোনারী। তিনি তুলা চাষ করেছেন, গম কেটেছেন এবং মরিচও চাষ করেছেন। তবে এই সবকিছুর মধ্যে তিনি ভুলে যাননি নিজের ছেলেবেলার দেখা স্বপ্নের কথা। তবে বাচ্চাদের পড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও, স্কুল খোলার জায়গা বা সংস্থান ছিল না সোনারীর।
সোনারি প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি পড়াতে শুরু করেন। কিন্তু তারপর সে ভাবল তিনি চাইলেই নিজের এলাকার মন্দিরকেই চাইলে স্কুলে রূপান্তর করতে পারেন। এরপর তিনি পরিবারের বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্দিরেই একটি স্কুল নির্মাণ করেন। প্রাথমিকভাবে, সোনারী যখন নিজের স্কুল শুরু করেছিলেন, তখন তার বিদ্যালয়ে মাত্র তিনটি মেয়ে ছিল, যার মধ্যে দুটি মেয়ে ছিল তার নিজের। সোনারি বাগরি বলেছেন যে একজন স্থানীয় সমাজসেবী এই কাজের জন্য তাকে প্রতি মাসে 5,500 টাকা বেতন দেন। ইতিমধ্যেই তার বিদ্যালয়ের পাঁচজন মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেছে, যাদের মধ্যে দুই মেয়ে সোনারীর নিজের। সোনারী বাগরি বলেন, “আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা ছেলেদেরও পড়ায় না, মেয়েদের তো কথাই নেই। আমি আমার পরিবারের প্রথম মেয়ে যে স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখনকার দিনে পড়ালেখার সময় ভেবেছিলাম গোত্রের উন্নতি করতে হলে এখানে শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে হবে। এভাবে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করাই আমার লক্ষ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এই স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়িত করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল আমার বংশের ছেলেমেয়েদের স্কুলের পথ দেখানোর, যারা এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
আজ সোনারীর স্কুলের মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়। যদিও আজও সেই শহরে লেখাপড়া করা কঠিন কারণ মানুষ শ্রম-ব্যবসা করতে পছন্দ করে এবং মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। মন্দির প্রাঙ্গণে বিদ্যালয় শুরু করার প্রসঙ্গে সোনারি বলেন, “এটি আমাদের শহরের সেরা মন্দির সাইট। কোনো অতিথিও এলে তার থাকার ব্যবস্থাও করা হয় এখানে। রাম পীরের উত্সবের জন্য আসা অনেক তীর্থযাত্রীও এখানে কয়েক দিন কাটান, কারণ এই মন্দিরটি আমাদের কাছে সবকিছু। এটি আমাদের জন্য এমন একটি ছায়া, যা ছাড়া আমরা কিছুই না।”
আরও পড়ুন-না খেলেও চলবে, কিন্তু সেক্স চাই! পছন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই স্পষ্ট জবাব অভিনেত্রীর
তবে বর্তমানে নিজের মন্দির স্কুল নিয়ে বেশ চিন্তিত সোনারী বাগরি। সিন্ধুতে বিশুদ্ধ জলের ইস্যু প্রসঙ্গে আদেশে বলা হয়েছিল যে সেচ দফতরের জমির সমস্ত দখল উচ্ছেদ করতে হবে। এই আদেশ অনুসরণ করে, সেচ বিভাগের একজন উপ-প্রকৌশলী এবং বর্তমানে ফালি খালের উপর দখল, অপসারণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মী বালু সিদ্দিকী বলেন, “আদালতের নির্দেশে তিনি আবদ্ধ। মানুষ বছরের পর বছর ধরে এখানে দখল করে আসছে। খালের দুই পাশ থেকে ৬০ ফুট জমি পরিষ্কার করতে হবে, যার মধ্যে সব ধরনের দখল রয়েছে। এই মন্দিরটিও দখলের আওতায় আসে। আমরা এখনও এটি টিজ করিনি কারণ এখানে স্কুল চলছে। মন্দিরটি বাঁচাতে সব রকমের চেষ্টা চলছে, কিন্তু সমস্যা হল মন্দিরটি সেচ দফতরের জমির প্রায় ৩০ ফুট ভিতরে।”