কাবুলের রাস্তায় শুরু হয়েছে রক্তের হোলি, ফিরেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা, কিন্তু কারা এই নৃশংস তালিবান?
গত ১৫ই আগস্ট,প্রায় দু দশক পর আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলো তালিবান। কিন্তু কারা এই তালিবান? কেন তাদের ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষেরা? এদিকে বুৎপত্তিগত ভাবে পাশতো ভাষায় ‘তালেব’ কথার অর্থ হলো ‘শিক্ষা’, এবং তালিবানের অর্থ হলো ‘শিক্ষার্থী’। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মাথা চাড়া দেওয়া মুজাহিদ্দিন গেরিলা বাহিনীর একাংশ নিয়ে তৈরী হয়ে এই গোষ্ঠী।
এদিকে ইতিহাস বলছে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের মাতৃভূমি কে স্বাধীন করার উদ্যোগ নেয় তালিবানেরা। পরবর্তীতে এইভাবেই সামাজিক রূপে এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে শুরু করে এই গোষ্ঠী। সোভিয়েত উত্তর কালে, গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাবার জন্যে মাঠে নামে তালিবানেরা, এইভাবেই নিজেদের প্রভাব গোটা দেশে ছড়িয়ে ফেলে তালিবানেরা। এরপর ১৯৯৪ সালে দলনেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমারের নেতৃত্বে, কান্দাহার শহরে নিজেদের প্রথম অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি খোলে এই গোষ্ঠী।
পরবর্তীতে দুই বছরের মধ্যেই আফগানিস্তানের সিংহভাগ দখল করতে সক্ষম হয় তালিবান। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতি বুরহানিদ্দিন রাব্বামির সরকার ফেলে দিয়ে রাজধানী কাবুল দখল করে তালিবানেরা। দেশের ছোট-বড় সব উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে নিজের সাথে নিয়ে, কট্টরপন্থী শরিয়া আইন লাগু করা হয়। এরপর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কাণ্ডের পর আল-কায়েদা তার দায়িত্ব নেয়, এবং মার্কিন বাহিনীর তত্বাবধানে তালিবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ইতিহাস বলথে পরবর্তীতে দীর্ঘ কুড়ি বছর, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং মার্কিন সেনার বিরুদ্ধে সংঘর্ষ চালাতে থাকে তারা। ২০১৫ সালে, মোল্লা মোহাম্মদ ওমারের মৃত্যুর পর, তালিবান সুপ্রিমো হন আব্দুল গানি বরাদর, তারই নেতৃত্বে আবার দুই দশক পর, কাবুলের ক্ষমতা দখল করলো তালিবানেরা। এই বছর ১৫ই আগস্ট, রাষ্ট্রপতি আশরাফ গানিকে ঠিক একই কায়দায় তালিবানেরা কাবুল পুনর্দখল করে।পাঁচ বছরের তালিবানি শাসনে আফগানিস্তানকে এক কট্টর শরিয়া শাসিত দেশে পরিণত করেছিল তালিবানেরা। নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার সবেতেই জারি করা ছিল বিধিনিষেধ। দুইদশকের সেই পুরোনো আতঙ্ক আজ আবার ফিরে এসেছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই ভয়েই এখন প্রহর গুনছে তারা।