শেষ মেশ কি হলো ‘পৃথিবীর সব থেকে ছোটো’ দেশের! রইল হাট রিভারের বিলুপ্ত হবার কাহিনী
৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ। হ্যাঁ, একদম ঠিক পড়ছেন। ২৬ জনের জনবসতি এই দেশে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত এই মাইক্রোনেশন এর ইতিহাস, খুব একটা পুরোনো নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ‘ প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার’ এর ব্যাপারে।
১৯৭০ সালের ঘটনা। অস্ট্রেলিয় সরকারের সাথে জমিকর নিয়ে কে বিশেষ ঝামেলা বাধে লিওনার্ড ক্যাসেলি নামের এক ব্যক্তি । আদালতে মামলা হেরে যাওয়ার পর, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন লিওনার্ড। নিজের ৪০০০ হেক্টরের চাষের জমি জুড়ে, ঘোষণা করেন নতুন দেশের। নাম দেন, প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার। ১৯৭০ সালের ২১ এপ্রিল নিজেকে সেই দেশের রাজা বলে ঘোষণা করেন লিওনার্ড, হয় রাজ্যভিষেক। তবে এইটুকু তে থেমে থাকেননি লিওনার্ড।
নিজের নতুন দেশের জন্যে তৈরী করেন আলাদা মুদ্রা, নাম রাখা হয়ে হাট রিভার ডলার। তা ছাড়াও আস্তে ধীরে তৈরী হয়ে সেই দেশের পাসপোর্ট, ভিসা ,সরকারি সিলমোহর থেকে শুরু করে পতাকা। তবে পৃথিবীর অন্য দেশগুলি মেনে নেয়নি প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভার কে দেশ হিসেবে। ১৯৭০ সালে ব্রিটেন তথা কমনওয়েলথের রানী, দ্বিতীয় এলিজাবেথ কে প্রতিষ্ঠা দিবসে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠান লিওনার্ড। যদিও রানী নিজে যেতে পারেননি, তবে অভিনন্দন জানিয়ে লিওনার্ডকে চিঠি পাঠান তিনি।
এরপর সময়ের সাথে সাথে প্রিসিপালিটি অফ হাট রিভারের কথা ছড়াতে লাগে সারা বিশ্বে। নানা দেশ থেকে পর্যটক দেখতে আসে এই স্বঘোষিত দেশটিকে। মোটা টাকা অর্থ উপার্জন করতেও শুরু করে ক্যাসলি পরিবার। তবে অস্ট্রেলিয়া তথা পৃথিবীর কোনো দেশ, আইনি ভাবে এই ভূখণ্ডকে দেশ বলে মেনে নেয়নি। ২০০৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের পাসপোর্টকে ‘ ফ্যান্টাসি পাসপোর্ট’ এর তালিকায় নথিভুক্ত করে।
আস্তে আস্তে আকর্ষণ কমতে থাকে প্রিন্সিপালিটি অফ হাট রিভারের। ২০১৭ সালে দীর্ঘ ৪৫ বছর ‘রাজত্ব’ করার পর গদি ছাড়েন লিওনার্ড। নিজের ছেলে গ্র্যামকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন উনি। তবে, ইতিমধ্যে বেড়েছে ঝামেলা। লিওনার্ডের নাম ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ আনে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বকেয়া ২৭ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার কর শোধ করার নোটিশ আসে তার কাছে। প্রতিদিন আরও বেশি আইনি জটিলতায় ফেঁসে যেতে থাকছিলেন হাট রিভারের প্রাক্তন মহারাজ।
২০১৯ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারী, তিরানব্বই বছর বয়সে মারা যান লিওনার্ড। আর তার মৃত্যুর পর, অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে তার সাধের দেশের। করোনা অতিমারীর দরুন, পর্যটন বন্ধ করতে হয়ে তাদের। এরপর করে বোঝা আরও বাড়তে থাকায়, গত বছর , ২০২০ সালের ৩রা অগাস্ট এই দেশ কে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে তুলে ফেলা হয়।