Kumartuli History: আজও দেবীর চক্ষুদান যাঁদের হাতে! জানেন কি কুমোরটুলির অজানা গল্পকথাগুলো?

বাতাসে ছড়িয়েছে পুজোর গন্ধ। শরতের শান্ত গাঢ় নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে এসে জানান দিচ্ছে আর বেশিদিন নেই। শীঘ্রই কৈলাশ থেকে বাপের বাড়ি অর্থাৎ পৃথিবীতে নিজের ছেলে মেয়েদের নিয়ে হাজির হবেন দেবী দুর্গা। ইতিমধ্যেই জোর কদমে দেবীর আগমনের জন্য আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলা জুড়ে। আর মহা ধুমধামে প্রস্তুতি চলবে নাই বা কেন? টানা দু’বছর যে মন খুলে পুজো উপভোগই করতে পারে নি বাঙালিরা। মানুষের আনন্দের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনা অতিমারি। তবে দু’বছর পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যাস! বাঙালিকে আর কে পায়, এবার পুজোতে চারদিনই সকল বাধা পিছনে ফেলে উপভোগ করবে তারা।

পুজো কাছে এগিয়ে এলেই যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি ( Kumartuli ) । বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসবের ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কুমোরটুলি। প্রতিবছর মহালয়ার দিন কুমোরটুলিতে দেবীর চক্ষুদানের মধ্য দিয়েই দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে যায়। কুমোরটুলির সঙ্গে দুর্গা পুজোর সম্পর্ক আজকের নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই কুমোরটুলি হয়ে উঠেছে বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

img 20220820 223230

কুমোরটুলির ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের এক ঝলক অতীতের দিকে নজর রাখতে হবে। সাল ১৬০৬, বাংলা তখনও ভাগ হয়নি। সেকালে বাংলায় প্রথম দুর্গা পুজো চালু করেছিল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। সেই সময় কলকাতায় জনবসতি সেভাবে গড়ে ওঠে নি। মূলত পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকেই কলকাতায় ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে।

সেসময় ব্রিটিশরা কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষদের জন্য বিভিন্ন জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কাঠের মিস্ত্রীদের জন্য তৈরি হয়েছিল ছুতারপাড়া, কুমোরদের জন্য কুমোরটুলি। সেই সময় বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ রোজগারের আশায় কলকাতায় আসতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা কুমোরটুলিতে নিজেদের বসতি স্থাপন করতে লাগে। পরবর্তীতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণদেব প্রথম নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই ধীরে ধীরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কুমোরটুলির নাম।

img 20220820 223159

১৯৩৩ সালে কুমোরটুলিতে প্রথম সার্বজনীন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অবস্থায় এখানে একচালা ডিজাইনে প্রতিমা তৈরি করা হত। কিন্তু ১৯৩৭ সাল নাগাদ এই স্থানে এক বিশাল অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই থেকেই শিল্পী গোপেশ্বর পালের উদ্যোগে কুমোরটুলিতে দোচালা ডিজাইনের প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বর্তমান সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে কুমোরটুলির নাম। প্রতি বছর এখানে প্রায় ১২০০০ প্রতিমা তৈরি হয়। এখানকার বানানো প্রতিমা জার্মানি, ফ্রান্স এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানি হয়। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবে কুমোরটুলির অবদান ভোলার মত নয়।




Back to top button