Kalo Durga Puja: শ্যামার মতোই তাঁর রূপ! জানেন কি কেমন ছিল কলকাতার ৪০০ বছর আগের কালো দুর্গা?

আর হাতে গুনে মাত্র কয়েক দিন, তারপরই শুরু হয়ে যাবে দুর্গোৎসব। গোটা বাংলা জুড়ে ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শিউলির সৌরভে সুরভিত শরৎ, সঙ্গে ঘন নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘ, সব মিলিয়ে যেন এক আলাদাই পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এসবের জন্যই তো প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকে বাঙালিরা। করোনা অতিমারী পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও বাঙালির পুজোর কেনাকাটায় কিন্তু একেবারেই ভাটা পড়বে না। এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর চারদিনের প্ল্যানিং।
শহর কলকাতায় সাধারণত দু’ধরণের পূজা আমরা দেখে থাকি, বারোয়ারি পূজা এবং জমিদার বা বনেদি বাড়ির দুর্গা পূজা। তবে এই দুই পূজা ছাড়াও শহর কলকাতার বুকে এমন এক দুর্গা পূজা হয় যা প্রায় অনেকের কাছেই অজানা। কথা হচ্ছে কালো দুর্গা পূজা নিয়ে। যদিও দেবী দুর্গার অপর রূপ মা কালী, তাই কালো দুর্গা পূজা বলতে আপনি যদি কালী পূজার কথা ভাবেন, তাহলে তা ভুল। এক্ষেত্রে গৌরবর্ণের দেবীর বদলে শ্যামবর্ণের দেবীর পূজা করা হয়।
ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ি
গোটা কলকাতা জুড়ে গৌরবর্ণের দেবী দুর্গার পূজা হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের অন্তর্গত ভট্টাচার্য বাড়িতে দুর্গা পূজার স্বরূপ অনেকটাই ভিন্ন। সেখানে পুজিত হন কালো রংয়ের দেবী। এই বাড়িতে যে দেবীর পূজা করা হয় সেই দেবীর মুখের রং কালো, এবং শরীর তামাটে বর্ণের। জানা গিয়েছে যে, আজ থেকে প্রায় ৪৩৭ বছর পূর্বে ভট্টাচার্য বাড়ির এই পূজা শুরু হয়েছিল। পূর্বে গৌরবর্ণে দেবীর আরাধনা হলেও প্রায় ২২০ বছর ধরে কালো রূপেই দেবীর পূজা হচ্ছে। এর পিছনে যদিও রয়েছে এক অদ্ভুত ইতিহাস। জানা গিয়েছে বাড়ির দুর্গা মন্দিরের পাশেই ছিল একটি মনসা মন্দির। একদিন পুরোহিত মনসা পূজা সেরে দুর্গাপূজা করতে আসলে একটি কাক মনসা মন্দির থেকে প্রদীপের জ্বলন্ত সলতে উড়িয়ে নিয়ে যায়। এবং সেই সলতে নাকি দুর্গা মন্দিরে পড়ে দেবীর মূর্তি সহ সবকিছু ঝলসে যায়। এমন অবস্থায় ভট্টাচার্য পরিবার পূজা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে, বাড়ির কর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তিনি নাকি ঝলসানো রূপেই পূজা নিতে চান। এই ঘটনার পর থেকে কালো রূপেই সে বাড়িতে দেবীর আরাধনা করা হয়।
বেলেঘাটা রামকৃষ্ণ নস্কর-লেন ভট্টাচার্য পরিবার
বেলেঘাটার এই ভট্টাচার্য পরিবারেও কালো রূপে দেবীর পূজা করা হয়। ২৯০ বছর ধরে এই পূজা হয়ে আসছে। পূজা চালু করেছিলেন হরিদেব ভট্টাচার্য। জানা গিয়েছে তিনি মা কালীর ভক্ত ছিলেন। এবং মায়ের থেকেই তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন যে বাড়িতে শ্যামবর্ণেই দুর্গা পূজা চালু করতে হবে। কিন্তু মায়ের এমন ইচ্ছার কোনও মানেই খুঁজে পাননি হরিদেব। যদিও পরে গঙ্গার কাছে বসে থাকা এক সাধুর কাছ থেকে হরিদেব জানতে পারেন যে মা ভদ্রকালী রূপেই তাঁর কাছ থেকে পূজিত হতে চান। এরপর থেকেই সে বাড়িতে কালো রূপে দেবীর আরাধনা করা হয়।