ঘন জঙ্গলে নরবলি দিয়ে জাগ্রত রটন্তী কালীর পুজো! ইংরেজ থেকে জমিদারের ত্রাস রঘু ডাকাতের কালীর গল্প শুনে নিন
দেখতে দেখতে এসে গেল দীপাবলি, আর দীপাবলি মানেই সারা বাংলা জুড়ে ধুমধাম করে মা কালীর আরাধনা। তবে এ কথা কে না জানে যে মা কালী এককালে কেবলমাত্র ডাকাত এবং তন্ত্রসাধকদের আরাধ্যা দেবী ছিলেন। আর ডাকাতদের কথা যদি বলতেই হয় তবে বাংলার ডাকসাইটে ডাকাতের সংখ্যা কিছু কম ছিল না আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও।
বাংলার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ডাকাতের নাম আজও মুখে মুখে ফেরে। এদের মধ্যে রঘু ডাকাত ছিলেন সবচেয়ে আলোচ্য। বাঙালি ধনী জমিদারদের পাশাপাশি ইংরেজদের বুকেও কাঁপন ধরিয়েছিলেন রঘু ডাকাত। সেই রঘু ডাকাতেরই আরাধ্য রটন্তী কালী পূজিতা হন মাঘ চতুর্দশী ও ভুত চতুর্দশী তিথিতে। আজ প্রায় দুশো বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো।
শোনা যায় রঘু ডাকাতের দল আগে চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে যেতো। বৃটিশ শাসকের বিরুদ্ধেও নীল বিদ্রোহে সরাসরি অংশ নিয়েছিল এই রঘু ডাকাত। তখনই বৃটিশ সরকার তাকে খুঁজতে শুরু করে। বৃটিশ পুলিশের তাড়া খেয়ে রঘু ডাকাত ও তার দলবল বাসা বাঁধে কেতুগ্রামের অট্টহাসের ঘন জঙ্গলের মধ্যে। সেখানেই রটন্তী কালীর পুজো করে ডাকাতি করতে বেরোতো রঘু ডাকাতের দল।
শোনা যায় রঘু ডাকাত কার্তিক অমাবস্যাতেই ঘন জঙ্গলে আয়োজন করেন রটন্তী কালীপূজার। কেতুগ্রামের জঙ্গলে আজও পুজো হয় রটন্তী কালীর যা রঘু ডাকাতের কালী নামে পরিচিত হয়। দেবীর পাষাণমূর্তির ওপর মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি রেখে চলে নিত্যসেবা। এককালে নরবলিও দেওয়া হতো এই কালীপুজোয়। পরবর্তীকালে আইন করে তা বন্ধ করা হলেও আজও ভক্তদের অনুরোধে ছাগ বলি হয়ে থাকে। রটন্তী কালীর পুজো তন্ত্রমতেই হয়। সেই কারণেই জঙ্গলের মধ্যে আছে পঞ্চমুন্ডির আসন। এই আসনে বামাখ্যাপা থেকে গিরীশ ঘোষ, মা কালীর সাধনা করতে এসেছেন অনেকেই।
সময় বদলেছে। এখন বৃটিশ সরকারও নেই আর রঘু ডাকাতও নেই। তবু রটন্তী কালীর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে রঘু ডাকাতের নাম। প্রতি বছর দীপাবলিতে তাই জেগে ওঠে কেতুগ্রামের ঘন জঙ্গল। সৃষ্টি হয় দুশো বছরের পুরোনো গা ছমছমে আবহ।