দাদা বাঙালি নাকি! বঙ্গবাসীর “ওয়ান্ডার লাস্ট”ই চনমনে পর্যটন শিল্পের ইউএসপি
পুজো শেষ এবং দীপাবলি আসন্ন, এর অর্থ জানেন কি? এর আসল অর্থ হল দেশ বিদেশের সমস্ত টুরিস্ট স্পটে বাঙালির ভীড়। ব এ বাঙালি আর ব এ বেড়ানো এদের যেন চিরন্তন সম্পর্ক। বেড়াতে ভালোবাসেনা এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। ঠিক সেই কারণেই ভারত সহ গোটা পৃথিবীতেই ট্যুরিজমের অন্যতম স্তম্ভ কিন্তু এই বাঙালিরাই।
তবে গত দুই বছরে করোনার আবহে বেড়ানোর চেনা ছবি কিভাবে পাল্টেছে এই প্রশ্ন থেকেই যায়। করোনার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প এবং বিশেষত ডোমেস্টিক ট্যুরিজম। ডোমেস্টিক ট্যুরিজমের অর্থ হল দেশের এবং রাজ্যের মধ্যেই ভ্রমণ। আর বাঙালির ডোমেস্টিক ট্যুরিজমের প্রধান ডেস্টিনেশন নির্দ্বিধায় দী-পু-দা অর্থাৎ দীঘা পুরী দার্জিলিং। সেই কারণেই বেশিরভাগ বাঙালি তাদের বার্ষিক আয়ের একটা অংশ রেখে দেন ভ্রমণ খরচ হিসেবে। তাছাড়া ভ্রমণ নিয়ে নানারকম পরীক্ষাও করতে রাজি বঙ্গসন্তান। তাইতো বিদেশ বিভুঁইয়ে খাবার পছন্দসই না হলে চলমান কিচেনের ব্যবস্থা রাখে বিভিন্ন ট্যুরিজম সংস্থা।
বাঙালির এমন ভ্রমণবিলাসের অন্যতম কারণ সত্যজিতের ভাষায় wander lust। বাঙালিদের উদ্যোগেই ভারতের বহু স্থান বর্তমানে অন্যান্য প্রদেশের মানুষদের কাছেও ট্রাভেল ডেস্টিনেশন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উদাহরণস্বরূপ লেহ লাদাখের কথাই বলা যায় যেটি বর্তমানের অন্যতম প্রিয় বাইক ডেস্টিনেশন। তবে আজ থেকে পনেরো বছর আগে ছবিটি মোটেই এমন ছিল না। অথচ সেই সময়েও ছুটি কাটাতে গিয়ে লেহ র এক নির্জন প্রান্তে দেখা মিললো একদল বাঙালির। প্রায় একই ছবি দেখা যায় কাশ্মীরের গুলমার্গ, সোনমার্গ এবং বিখ্যাত স্পটগুলিতে। সেখানকার গাইডরা চলনসই ইংরাজি বা হিন্দি জানলেও বাঙলা ভাষায় তারা সবচেয়ে বেশি সাবলীল।
পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাওয়া হোক না কেন বাঙালির দেখা পাওয়া যেন একপ্রকার নিশ্চিত। সেই কারণেই “দাদা বাঙালি নাকি” এই বাক্যবন্ধটি বিদেশে গেলেই শুনতে পাওয়া খুবই পরিচিত দৃশ্য। এমনকি চরমতম দুর্গম জায়গাতেও একজন বাঙালির দেখা মিলবেই। হয়তো সেই কারণেই বাঙালির সাহিত্যের ভাঁড়ারও ভ্রমণের মণিমাণিক্যে পরিপূর্ণ। বিভূতিভূষণ এর চাঁদের পাহাড় থেকে শরৎচন্দ্রের দেওঘর, বাঙালির ভ্রমণের খিদে বারবার জন্ম দিয়েছে কালজয়ী সাহিত্যের।