Kolkata: মনে একটাই জেদ স্বাধীন ভারত! ছদ্মবেশে কলকাতার এই বাড়িতে দিন কাটিয়েছেন ভগৎ সিং

দুয়ারে কড়া নাড়ছে স্বাধীনতা, দেশের আজাদি কা অমৃত মহোৎসব তো আমরা সকলেই পালন করছি। কিন্তু দেশের কী বা জানি? কতটুকুই বা জানি আমাদের কলকাতার? শ্যামবাজার মোড়ে থাকা মূর্তিতে মালা দিলেই কি সব দায়িত্ব শেষ? নাকি নেতাজী আর গান্ধীজীর নাম মনে রাখলেই যথেষ্ট! এই শহরের কোনখানে লুকিয়ে আছে কতখানি সত্য ইতিহাস? আসুন দেখে নিই, সেই ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা।
লাহোর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় একটি পরিবার। এক মহিলা তাঁর স্বামী ও সন্তান তাদের সঙ্গে মালপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে এক চাকর। গন্তব্য লখনউ। স্টেশনে কড়া পুলিশ প্রহরা। বিট্রিশ পুলিশের কাছে খবর, অফিসার স্যান্ডার্স-কে যে হত্যা করেছে, একজন শিখ , অবিবাহিত যুবক। চারিদিকে পুলিশে ছয়লাপ, হন্যে হয়ে খুঁজছে বিপ্লবীকে। এই বিপাকের মধ্য দিয়েই লখনউগামী ট্রেনে উঠল সেই পরিবার। কাক পক্ষীতেও টের পেল না, এই পরিবারের ভেতরেই লুকিয়ে আছে সেই বিপ্লবী। আত্মগোপন করার জন্য সবার আগে নিজের চুল-দাড়ি কাটলেন যুবক। হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ভগবতী চরণ ভোহরা’র সঙ্গে। তাঁর স্ত্রী দুর্গা দেবী ভোহরা ওরফে দুর্গা ভাবী-ও সক্রিয় বিপ্লবী ছিলেন । স্যান্ডার্স-কে হত্যা করার পর ভগৎ সিং গিয়ে হাজির হলেন তাঁদের পরিবারের কাছে। দুর্গা ভাবী একবাক্যে রাজি হলেন যুবককে স্থান দিতে। কে এই যুবক? আসলে তিনিই সেই পাঞ্জাব শের। ভগৎ সিং।
লাহোর স্টেশনে স্বামী-স্ত্রী’র ছদ্মবেশে সেদিন ছিলেন ভগৎ সিং আর দুর্গা ভাবী সঙ্গে ছিল তাঁর ছোট্ট সন্তানও। ছদ্মবেশে সবাই মিলে উঠলেন ট্রেনে। লখনউ গিয়ে যখন ট্রেন বদল করে পৌঁছালেন কলকাতা। পৌঁছানোর আগে কলকাতায় নিজের বান্ধবী সুশীলা দেবীকে টেলিগ্রাম করলেন দুর্গা ভাবী। আত্মগোপন করার সমস্ত আয়োজন করতে তৎপর হলেন সুশীলা। সাহায্য চাইলেন ছাত্রীর বাবা ছাজুরাম চৌধুরীর কাছে। ভগৎ সিংকে নিজের বাড়িতে একবাক্যে আশ্রয় দিতে রাজি হলেন ছাজুরাম। কলকাতায় আসার পর কাশীপুরের বাড়িতেই উঠলেন ভগৎ সিং। তবে এখানেও বিপদ পিছু ছাড়ে না। ব্রিটিশ পুলিশের কাছে পৌঁছেছে বিশেষ সংবাদ। আরও জোরদার হয়েছে তল্লাশি।নতুন উপায় বের হল। ছাজুরাম চৌধুরী ছিলেন আর্য সমাজের কর্তা। আর্য সমাজ মন্দির হল ভগৎ সিংয়ের আস্তানা।এখানে ব্রিটিশ পুলিশ নাগাল পাবে না, তাই ভগৎ সিংয়ের আত্মগোপনের পক্ষে এটাই সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
কোথায় এই বাড়ি?বিধান সরণির ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু যে বাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে, তারই দোতলার একটি ঘরে বেশ কয়েকমাস লুকিয়ে ছিলেন ভগৎ সিং। অবশ্য এর আগেও এসেছেন তিনি কলকাতায় এসে এই আর্য সমাজ মন্দিরেই থেকেছিলেন বহুবার। বোমা বানানোর কৌশল শিখেছিলেন। দোতলার বাঁ দিকের একটা ঘরে থাকতেন তিনি। আজ থেকে ৯২ বছর আগে কলকাতার এই ঘরেই যে লুকিয়ে ছিলেন সেই মহান বিপ্লবী ভগৎ সিং!