ভাইফোঁটা 2021 : কখন-কিভাবে ফোঁটা দিলে শুভ? একনজরে ভাইফোঁটার ইতিবৃত্ত
দীপাবলির শেষের ঘন্টা মানেই মিষ্টির দোকানে ভীড়। কারণ রাত পোহালেই ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। বোনেরা এইদিন সমস্ত ভাইয়ের কপালে দই অথবা চন্দনের ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলকামনায় ব্রতী হবে দেশজুড়ে। সেইসঙ্গে মুখে থাকবে সেই চিরপরিচিত ছড়া, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা”
যমের দুয়ারে কাঁটা পড়ার এই মন্ত্রের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভাইফোঁটার আরো এক নাম। এই উৎসবের আরো এক নাম যমদ্বিতীয়া। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী ধর্ম ও মৃত্যুর দেবতা যমকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আমন্ত্রণ করেন বোন যমি বা যমুনা। সেখানে যম নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলে শুভক্ষণে কপালে ফোঁটা দিয়ে আরতি করে মঙ্গল কামনা করেন যমুনা। বোনের হাতের চমৎকার রান্না এবং আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যম আশীর্বাদ করেন যে এই পুণ্য তিথিতে যে ভাইরা বোনের থেকে ফোঁটা নেবেন তারা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
যম ও যমুনা যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে ভাইফোঁটার সঙ্গে যুক্ত তেমনই কৃষ্ণ ও সুভদ্রারও একটি কাহিনী জড়িয়ে আছে এই দিনের সঙ্গে। মহাভারত অনুযায়ী নরকাসুর নামে এক দানবকে বধ করে কৃষ্ণ দ্বারকায় ফেরেন কার্তিক মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে। বোন সুভদ্রা তখন তিলক পরিয়ে বরণ করে নেন দাদা কৃষ্ণকে। সেই থেকেই সারা ভারতে প্রচলন হয় এই উৎসবের।
বাংলায় এই উৎসবের নাম ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হলেও হিন্দিভাষীদের কাছে এই দিনের নাম ভাইদুজ, আবার মহারাষ্ট্রে ভাও বিজ এবং দার্জিলিংয়ে এই উৎসব ভাইটিকা নামে পরিচিত। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ই নভেম্বর সারা দেশ জুড়ে পালিত হবে এই উৎসব। যদিও দ্বিতীয়া পড়বে ৫ তারিখ রাত ১১টা১৪ মিনিটে এবং চলবে পরের দিন অর্থাৎ ৬ তারিখ সন্ধে ৭টা ৪৪মিনিট পর্যন্ত। তবে ফোঁটা দেবার সবচেয়ে শুভ সময় দুপুর ১টা ১০ মিনিট থেকে ৩টে ২১ মিনিট পর্যন্ত।
ভাইফোঁটা দিতে সাধারণত চন্দন অথবা দইয়ের ফোঁটাই ব্যবহার করেন বোনেরা। সঙ্গে অনুসঙ্গ হিসেবে থাকে দূর্বা, মঙ্গল প্রদীপ এবং শঙ্খধ্বনি। পশ্চিমবঙ্গে ওপার বাংলা থেকে আসা পরিবারগুলিতে অবশ্য প্রতিপদেও ফোঁটা দেবার নিয়ম প্রচলিত আছে। শাস্ত্র অনুযায়ী পূর্বদিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়াই সবচেয়ে শুভ হিসেবে গণ্য হয়। উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকেও অসুবিধা নেই। তবে দক্ষিণ দিকে মুখ করে কখনোই ফোঁটা নেওয়া উচিত নয়।