Durga Puja: একালের মতো কোটি টাকা নয়! ব্রিটিশদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেকালের দুর্গা পুজো মিটত আড়াই হাজার টাকায়

প্রবাদে রয়েছে, “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ”। কথাটি কিন্তু কেবল লোক মুখেই প্রচারিত নয়, বাঙালির আসলেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাংলায় যেন উৎসব, পার্বণ শেষ হওয়ার নামই নেয় না। আর উৎসব প্রিয় বাঙালিরাও প্রতিটি উৎসব হাসি, মজা, আনন্দের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। আমরা সকলেই জানি, বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব হল দুর্গোৎসব। সকল বাঙালি অধীর আগ্রহে দুর্গা পূজার অপেক্ষায় দিন গোনে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যখন পূজা আসে, তখন সেই চারদিন আনন্দে মেতে থাকে প্রতিটি বাঙালি। তারপর দেবী বিসর্জনের সময় সকলের মুখে ফুটে ওঠে বিষাদের ছায়া। এরপর আবার শুরু হয় পরের বছরের জন্য অপেক্ষা।
দুর্গা পূজা আসলেই কলকাতার প্রতিটি গলি সেজে ওঠে নতুন সাজে। আমরা সাধারণত কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় দু’ধরনের দুর্গা পূজা দেখতে পাই। একটি হল সার্বজনীন দূর্গা পূজা এবং অপরটি হল বাড়ির পূজা। কলকাতায় এই দুর্গা পূজা নাকি শুরু হয়েছিল জমিদার বাড়ির পূজা থেকেই। জানা গেছে লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় নামে একজন জমিদার ১৬১০ সালে নিজের বাড়িতে প্রথম দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন।
উত্তর কলকাতার বিখ্যাত একটি পূজা হল শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গা পূজা। জানা গেছে প্রথম এই রাজবাড়িতে দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। সেই থেকেই তাঁর বাড়ির পুজো দেখার জন্য লোকজনের ভিড় পড়ে যেত। এরপর ১৭৫৭ সালে বহু জমিদার বাড়িতে ধীরে ধীরে দুর্গা পূজার আয়োজন শুরু হয়। ১৮৪০ সালে জোড়াসাঁকোর দাঁ-বাড়ির পূজা যেন আলাদাই জনপ্রিয়তা পায়। জানা যায় সেখানে নাকি প্রতিমার চালচিত্র তৈরির জন্য সোনা, পান্না, এমনকী হিরের ব্যবহারও করা হত। তখনকার সময়েই পুজোর খরচ হত ২,৫০০ টাকা, ভাবা যায়!
এরপর অনেক জায়গায় বারোইয়ারি দুর্গাপূজার সূচনা হয়। ১৯১৯ সালে উত্তর কলকাতায় নেবুবাগান বারোইয়ারি দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল, যা বর্তমানে বাগবাজার সার্বজনীন দূর্গা পূজা নামেই বহুল পরিচিত। এই পূজার সাথে কিন্তু জড়িয়ে রয়েছে একজন সংগ্রামীর নামও। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, স্বয়ং নেতাজি একবছর এই পূজা কমিটির প্রধান ছিলেন। এরপর থেকে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় দু হাজারের বেশি বারোইয়ারি পূজা শুরু হয়েছিল।
দুর্গা পূজার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে বাঙালির আবেগ। সে বাড়ির পূজা হোক কিংবা সার্বজনীন পূজা, বাঙালি আজও প্রতি বছর এই চার দিন কেবল মায়ের আশার অপেক্ষায় থাকে।