Bidhan sarani: রাত বাড়লেই হুঙ্কার পড়ত ডাকাতদের! তিলোত্তমার বিধান সরণী আজও বলে সেকালের কথা

প্রাণের শহর কলকাতা। এই তিলোত্তমা নগরীকে মায়ানগরীও বলা যেতে পারে। একবার কলকাতার বুকে বসবাস শুরু করলে এই শহরের মায়াজাল কাটিয়ে বেরোনো রীতিমত অসম্ভব। কলকাতা মানে এক আলাদাই নস্টালজিয়া। এককালে ব্রিটিশদের বাস ছিল যে কলকাতায়, সে শহরের গলিতে গলিতে লুকিয়ে রয়েছে বহু অজানা ইতিহাস। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বুকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও উত্তর কলকাতা কিন্তু আজও নিজের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। আর এই উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী একটি রাস্তা হল বিধান সরণী।
আসলে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের নামানুসারে এই রাস্তার নাম রাখা হয়েছিল বিধান সরণী। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে শুরু করে হ্যারিসন রোড ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার নাম বিধান সরণী। ইতিহাসের পাতায় আমরা সকলেই লর্ড কর্নওয়ালিশের কথা পড়েছি। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবক্তা লর্ড কর্নওয়ালিশের নামানুসারেই পূর্বে এই রাস্তার নাম কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট রাখা হয়েছিল। পরে তা বদলে বিধান সরণী রাখা হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে হাতিবাগান। যদিও এই নামের পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। শোনা যায় ১৭৫৬ সালে যখন নবাব সিরাজদৌলা ফোর্ট উইলিয়াম আক্রমণ করতে এসেছিলেন, তখন নবাবের হাতগুলি এই স্থানেই রাখা হয়েছিল, সেই থেকেই জায়গার নাম হয়েছে হাতিবাগান।
এছাড়াও কলকাতার সব থেকে বড় বিনোদন ক্ষেত্র বলতে সবার প্রথমে বিধান সরণীর কথাই মাথায় আসে। স্টার থিয়েটার তখনকার সময় এই রাস্তার সবথেকে বড় থিয়েটার ছিল। যদিও বর্তমান সময়ে এই থিয়েটারটিকে সিনেমা হলে রূপান্তর করা হয়েছে। স্টার থিয়েটার ছাড়াও তখনকার সময় এই বিধান সরণীর দু ধার দিয়েছিল আরও অনেক থিয়েটার। নাটক, যাত্রাপালা প্রভৃতির জন্য বেশ জমজমাট ছিল এই সরণী।
এসব ছাড়াও আরও একটি কারণে প্রসিদ্ধ এই বিধান সরণী। এখানে ঠনঠনিয়া কালী বাড়ির কথা সকলেরই জানা। তবে এই নামের পিছনেও রয়েছে এক মজার ইতিহাস। জানা গেছে একসময় বেশ কিছু কামার পরিবারের বাস ছিল সেখানে। আর সেখান থেকেই প্রতিনিয়ত ঠনঠন করে লোহা পিটানোর আওয়াজ আসত। সেই থেকেই নাকি এই স্থানের নাম ঠনঠনিয়া। আবার অনেকের মতে জানা গিয়েছে পূর্বে ওই এলাকায় নাকি ডাকাতের উপদ্রব ছিল। আর ডাকাত আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিলেই ওই স্থানের বাসিন্দাদের সজাগ করতে সেখানকার মন্দিরে ঠনঠন করে ঘন্টা বাজত। সেই থেকেই ওই স্থানের নাম ঠনঠনিয়া।
সময়ের সাথে সাথে বদলেছে অনেক কিছুই। তবুও এই শহরতলীর প্রত্যেকটি অলিগলি যেন প্রতিনিয়তই এক নতুন গল্প লেখে। প্রতিদিনের ব্যস্ততার ভিড়েও যেন মানুষের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। তাই তো এই মায়ার শহরে পা রাখলে আর ফেরা যায় না।