জমিদারি ছেড়ে বারোয়ারি! বনেদিয়ানা ছেড়ে কীভাবে আপামর বঙ্গবাসীর ঘরের মেয়ে হয়ে উঠল উমা
আপামর বাঙালিরা সারাবছর যে কয়েক দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকে সেটা হল দুর্গাপুজো (Durgapuja)। দেবী দুর্গার আরাধনায় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত যে কটা দিন থাকে তার জন্য রীতিমত অপেক্ষায় থাকে বাঙালিরা বছরের ৩৬০টা দিন। নতুন বছরের ক্যালেন্ডার হাতে পেয়েই এই দিনগুলোকেই সবার আগে খুঁজে দেখে নেয় বাঙালিরা। দুর্গাপূজাটা শুধুই পুজো নয় বাঙালিদের কাছে একটা আবেগ বা বলা ভালো একটা উৎসবের মত।
পুজোর কটা দিন বন্ধুদের সাথে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, জমিয়ে আড্ডা, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা থেকে এলাহী খাওয়া দাওয়া কত কি না হয়। মহালয়ার দিন থেকেই রীতিমত শুরু হয়ে যায় দিন গোনা, স্বর্গলোক ছেড়ে দেবাধিদেব মহাদেব কন্যা আসবেন মর্ত্যে। মহালয়ার (Mahalaya) সকালে মহিষাসুর বধ করে ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য মর্ত্যবাসীর কাছে থাকেন মা দূর্গা।
পাড়ায় পাড়ায় ছোট বড় নান ধরণের প্যান্ডেল সেজে ওঠে পুজোর এই কটা দিন। শয়ে শয়ে মানুষ লাইন দিয়ে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া আলাদাই একটা অনুভূতি তৈরী করে। পাড়ার পুজোগুলোকে অনেকেই আবার বারোয়ারি পুজোও (Barowari Duragapuja) বলে থাকেন। এই দুর্গাপূজার রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী ১৫০০ শতাব্দীর থেকেই দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল।
মালদার এক জমিদার স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। প্রথমদিকে রাজা বা জমিদার বাড়িতেই হাত দুর্গাপুজো। তবে ১৯৭০ সালে গুপ্তিপাড়ায় প্রথম ১২জন বন্ধু বা ইয়ার মিলে দুর্গাপুজো শুরু করে। ১২ জন বন্ধুর এই পুজো থেকেই বারো ইয়ারি বা আজকের বারোয়ারি পূজা শব্দটা এসেছে।
এছাড়াও কলকাতায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ। স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে কলকাতায় দুর্গাপুজো। শুধুমাত্র বাঙালিরাই নয় দুর্গোৎসবে মেতে উঠতেন ব্রিটিশরাও। জানা যায় ১৯১০ সালে প্রথম কলকাতায় বারোয়ারি দূর্গা পূজা শুরু হয়।
গুপ্তিপাড়ার এই পুজোর দেখাদেখি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পুজোর সংখ্যা একসময় যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি দুর্গাপুজো হত সেখানে আজ প্রায় প্রতিটা পাড়াতেই দুর্গাপুজো হয়। সেখানেই এলাকার বাসিন্দারা মেতে ওঠে দুর্গোৎসবে।