Mangal Pandey park: শেষ হয়নি দায়িত্ব! ইতিহাস খুঁড়ে আজও ব্যারাকপুর পার্কে পাহারা দিচ্ছেন সিপাহী নেতা মঙ্গল পান্ডে

প্রাণের নগরী আমাদের এই কলকাতা। এই শহর কলকাতার বুকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের আনাগোনা হয়। সারাদিনের ব্যস্ততায় এই শহরে সকাল থেকে কখন সন্ধ্যে হয়ে যায় তা বোঝা বড় দায়। তবুও এই ব্যস্ততার মাঝে আজও যেন কথা বলে প্রাচীন ইতিহাস। কলকাতার প্রতিটি স্থান কোন না কোন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। আর এরকমই একটি স্থান হল বারাকপুর। শিয়ালদহ থেকে মেইন লাইনের ট্রেন ধরলে যে অষ্টম স্টেশনটি পড়বে, সেটাই বারাকপুর।
‘ব্যারাক’ শব্দের অর্থ হল সেনাবাহিনী। ইতিহাসে বারাকপুরের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদিত রয়েছে। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে জানা যাবে যে পূর্বে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় এই স্থানে সেনাছাউনি ছিল। এই স্থানেই ধোবি ঘাটে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল মঙ্গল পান্ডেকে। নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই শহর আজও সেই সব ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করে। আজও এই শহরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বন্দুকধারী সৈন্যদের টহল চলে। বর্তমানে শত নিস্তব্ধতার মাঝেও যেন দূর দুরান্ত থেকে ভেসে আসে কামান গোলার শব্দ।
কেবল মঙ্গল পান্ডেই নন, বারাকপুরের মাটিতে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, বাদশা খান এমনকি শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবেরও পদধুলি পড়েছে। এখানেই রয়েছে দেশের প্রাচীনতম বিমানঘাঁটি। এমনকি এশিয়ার সর্বপ্রথম চিড়িয়াখানাও রয়েছে এই শহরে। তবে যে স্থানটি এখানে সবচেয়ে বিখ্যাত, সেটি হল মঙ্গল পান্ডে পার্ক। এবং এই স্থানে যেতেও সেরকম খরচ নেই। বারাকপুর স্টেশন থেকে নেমে টোটো অথবা অটোতে উঠলেই মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। ব্যাস! আপনি পৌঁছে যাবেন মঙ্গল পান্ডে পার্কে।
বারাকপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের পাশের রয়েছে এই জনপ্রিয় পার্ক। পার্কের প্রবেশ করতে লাগবে মাত্র ১০ টাকা। তবে যদি নেহাত ক্যামেরায় ছবি তুলতে চান, তাহলেও রয়েছে ভিন্ন মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা। পার্কের ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই সবুজের ঘনঘটায় চোখ যেন একেবারে জুড়িয়ে যায়। পার্কের সর্বত্র সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে অজস্র গাছপালা। এখানে গাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় মন যেন পায় চরম শান্তি। পার্কের আর একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় মঙ্গল পান্ডের মূর্তি। এছাড়াও রয়েছে একটি বড় কামান। গোটা পার্কটি যেন আজও সেসব প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আজও বারাকপুরের বুকে এই পার্কটি রয়ে গিয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে অনেক কিছু। বর্তমানে বারাকপুরের সমস্ত স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের বিকেল বেলার আড্ডা, সকল প্রেমিক-প্রেমিকার কথোপকথনের জায়গায় পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। বর্তমানে চা, ফুচকা প্রভৃতির দোকানও শুরু হয়েছে এই পার্ককে ঘিরে। নতুনত্বের মাঝে ঐতিহাসিক স্মৃতিকে আজও আকড়ে ধরে রেখেছে ইতিহাসের শহর বারাকপুর।