India’s Mr Universe- ভারতের প্রথম বিশ্বশ্রী, বাংলার সোনার সন্তানের মাসেলে

১২ বছর বয়সে শরীরচর্চা শুরু। একলভ্য যেমন দ্রোণাচার্যকে গুরু হিসাবে মেনে হয়ে উঠেছিল সর্বোত্তম তীরন্দাজ, তেমনই ব্যায়ামাচার্য বিষ্ণুচরণ ঘোষকে গুরু পদে বরণ করেছিলেন তিনি। বিষ্ণুবাবুর ছবি সামনে রেখে চালিয়ে যেতেন যোগব্যায়াম (Body Building)। বিষ্ণুচরণ ঘোষ অবশ্য দ্রোণাচার্য মত ব্যবহার না করে, তাকে নিজের ছাত্র বানিয়ে নিলেন। সেই ছাত্রের নাম মনোতোষ রায়, যিনি পরে হয়ে উঠলেন এশিয়া (Asia) তথা ভারতের (india) প্রথম বিশ্বশ্রী (mr universe) । অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলায় তাঁর জন্ম ১৯১৬ সালে।

ব্যায়াম এবং হঠযোগের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সেসময়কার স্বাস্থ্য-সচেতন তরুণদের আইকন হয়ে উঠেছিলেন বিষ্ণুচরণ ঘোষ। তাঁকে শিক্ষক হিসেবে পাওয়া ছিল যেন এক ভাগ্যের বিষয়। মনোতোষ রায় পড়ে গেলেন বিষ্ণুবাবুর নজরে। গুরু হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন আগেই, বিষ্ণুবাবুর কাছে সরাসরি প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে হাতে যেন তিনি স্বর্গ পেলেন। মনোনিবেশ করলেন কঠোর দেহচর্চায়। অবশ্য, ১৯৩৯ সালে জীবনের প্রথম বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় সফল হতে পারেননি। ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে নতুন উদ্যমে পরিশ্রম করতে লাগলেন ২৩ বছর বয়সী মনোতোষ। অধ্যবসায়ের ফল মিলল একদম সেই বছরই। ১৯৩৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ান বডি-বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হলেন মনোতোষ। সেইভাবেই তাঁর যাত্রা শুরু হল। ১৯৪৭ সালে মনোতোষ জিতে নিলেন অল ইন্ডিয়া বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপের সেরার সেরা শিরোপা।

বিশ্বশ্রী,শরীরচর্চা,বডি বিল্ডিং,বাংলা,যোগব্যায়াম,Vishwasree,Body Building,Bengali,Yoga,India,Asia,mr-universe,Manotosh Roy,ভারতের প্রথম বিশ্বশ্রী,বিষ্ণুচরণ ঘোষ,বাংলা থেকে মিস্টার ইউনিভার্স,কে এশিয়ার প্রথম বিশ্বশ্রী,India's first mr-universe,Vishnucharan Ghosh,Mr. Universe from Bengal,K Asia's first mr-universe

তারপর মনতোষ রায় সারা বাংলার তথা দেশের সাফল্যের মুকুটে যোগ করলেন এক নতুন পালক। ১৯৫১ সালে তিনি পাড়ি দিলেন ইংল্যান্ডে; অংশগ্রহন করলেন মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায়। তাঁর পেশিবহুল শরীরের গঠন দেখে দর্শকরা এক্কেবারে হতবাক। শোনা যায়, মনতোষ রায়ের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি লাইন দিয়েছিলেন বহু ফ্যান। সেই প্রতিযোগিতায় গ্রুপ থ্রি অ্যামেচার বিভাগে তিনিই হলেন বিজেতা। এই সাফল্যের পর ব্রিটেনের ইন্ডিয়া হাউজে তাঁকে সংবর্ধিত করা হয়েছিল। সেও এক বিশাল আয়োজন। আরও অবাক করা বিষয়, সেই বছরই মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার এই বিভাগেই দ্বিতীয় হয়েছিলেন বাংলারই আরও এক প্রবাদপ্রতিম বডিবিল্ডার মনোহর আইচ। ইনিই পরের বছর ১৯৫২ সালে ফের সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মিস্টার ইউনিভার্সের খেতাব অর্জন করেন।

আরও পড়ুন……KARTIK PUJA 2021 – শুধুই নয় শিশু কামনা, কার্তিকের রয়েছে আরও নানাবিধ রূপ

বিশ্বশ্রী খেতাব জয়ের পর দেশে ফিরলেন মনতোষ রায়। তখন দেশবাসীর কাছে তিনি এক প্রস্ফুটিত জীবন্ত কিংবদন্তি। সেরা সেরা যোগব্যায়াম প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রশিক্ষণ দিতেন, তাঁর ছাত্রদের মধ্যেও অনেকেই পরে হয়ে উঠেছিলেন বডিবিল্ডিং-এর জগতে তারকা। ১৯৫৮ সালে মনতোষ রায় প্রতিষ্ঠা করলেন ইন্ডিয়ান বডিবিল্ডিং ফাউন্ডেশন। এশিয়ান বডিবিল্ডিং ফেডারশনেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনিই।  ১৯৯৮ সালে নিজের বাড়ির কাছেই তৈরি করলেন এক মাল্টিজিম। আরও বেশ কিছু যোগব্যায়াম সংস্থা নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন। এসবের মাঝেই চলত নামি-অনামি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি। তথাপি, বিষয় অবশ্যই যোগব্যায়াম এবং শরীরচর্চা। ব্যায়ামের উপর লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি বইও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল কলেজে শরীরচর্চার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন বহুদিন। ২০০১ সালে ইন্টারন্যাশানাল বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের তরফ থেকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টে’র জন্য তাঁকে ভূষিত করা হয়, সোনার পদকে। সোনার দেশের মানুষ সোনার পদক পেয়ে সোনালী আলোয় আজও বাংলার সবচেয়ে দামী রতনের একজন হয়ে আছেন বিশ্বশ্রী মনতোষ রায়।




Back to top button