Ashwatthama: কপাল বেয়ে সেই লাল রক্তের স্রোত! আজও নাকি বেঁচে আছেন মহাভারতের অশ্বথামা

রাখী পোদ্দার, কলকাতা : হিন্দুদের মহাকাব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম চর্চিত মহাকাব্য হল ‘মহাভারত’ ( Mahabharat)। মহাভারতের কাহিনী জানেনা এমন মানুষ হয়তো খুঁজলেও পাওয়া সম্ভব নয়। আর মহাভারত সম্পর্কে কথা উঠলেই যে বিতর্কিত নামটি উঠে আসে সেটি হল অশ্বথামা ( Ashwatthama)। শোনা যায় গুরু দ্রোণাচার্যের ছেলে অশ্বথামা ছিলেন নাকি চিরণজীবী। অর্থাৎ যার মৃত্যু নেই, সে অমর। আর এই অমরত্বের বরদান তিনি পেয়েছিলেন খোদ মহাদেবের থেকে। অশ্বথামার কপালে ছিল একটি দৈব রত্ন পাথর, যা ছিল তাঁর অমরত্বের বরদান। মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় অশ্বথামার কপালে থাকা সেই অমরত্বের রত্ন পাথরটি নষ্ট করে তাঁর কপালে চিরতরে ক্ষতের সৃষ্টি করেন কৃষ্ণ। অশ্বথামার থেকে তাঁর মৃত্যুই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কৃষ্ণ ( Lord Krishna)। মহাভারত একটি কাব্যগ্রন্থ হলেও ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অশ্বথামাকে শুধু সাহিত্যিক চরিত্র হিসেবে দেখেন না, বরং তাঁদের অনেকের বিশ্বাস অশ্বত্থামা আজও রয়েছেন বেঁচে।

যখন কৌরবরা কুরুক্ষেত্রের ভয়াবহ যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরেছিলেন তখন জ্যেষ্ঠ কৌরব পুত্র দুর্যোধন অশ্বথামাকে আদেশ দিয়েছিলেন পান্ডবদের হত্যা করার। রাতের অন্ধকারকে আশ্রয় করে অশ্বথামা ( Ashwatthama) পান্ডবদের শিবিরে যান তাঁদের হত্যা করতে। ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা পান্ডব পুত্রদের পান্ডব ভেবে হত্যা করেন অশ্বথামা। এরপর যখন অশ্বথামা জানতে পারে যে পান্ডবরা এখনও বেঁচে রয়েছে তখন অশ্বথামা ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেন উত্তরার গর্ভে। অভিমন্যুের স্ত্রী উত্তরা সেইসময় ছিল অন্তঃসত্ত্বা। এমতাবস্থায় শ্রী কৃষ্ণ উত্তরার সন্তানকে পুনরায় জীবিত করে তোলেন।

Ashwatthama
Ashwatthama

আর অশ্বথামাকে ( Ashwatthama) তাঁর অপরাধের শাস্তির জন্য শ্রী কৃষ্ণ ( Lord Krishna) তাঁকে দিয়েছিল অভিশাপ। অশ্বথামার কপালে থাকা রত্ন পাথরটি নষ্ট করে তাঁর থেকে মৃত্যুই কেড়ে নিয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণ। শ্রী কৃষ্ণ অশ্বথামাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন রত্ন পাথরটি নষ্ট হওয়ার ফলে তাঁর মাথায় যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা কখনওই ঠিক হবে না। এবং তাঁর সারা শরীরে সৃষ্টি হবে পুঁজের যার থেকে ঝরতে থাকবে রক্ত। ভয়ানক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েও কলিযুগের শেষ অবধি বেঁচে থাকবে অশ্বথামা। এছাড়াও কৃষ্ণ অভিশাপ দেয়, তাঁকে এই অবস্থায় দেখা স্বত্ত্বেও কেউ সাহায্য করতে আসবে না তাঁকে। এমন অবস্থাতেই তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে আজীবন। তাঁর মানে কী আজও এই পৃথিবীতে বেঁচে রয়েছেন অশ্বথামা? তাহলে কোথায় এখন সে?

Ashwatthama
Ashwatthama

শোনা যায়, আজ থেকে কয়েক বছর আগে ভারতের মধ্য প্রদেশের এক আয়ুর্বেদ ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসার জন্য একজন অদ্ভুত রুগী আসেন। তাঁর কপালে ছিল অস্বাভাবিক এক ক্ষত। ডাক্তারটি জানান, তিনি তাঁর জানা সমস্ত ওষুধ প্রয়োগ করেছিলেন ঐ ক্ষতে। এরপর ৎসেলাই করে জুড়েও দিতে চেয়েছিলেন সেই ক্ষত। কিন্তু রুগীটার কপালের ঐ ক্ষত কোনভাবেই সারছিলো না৷ তাই কৌতুকের উদ্দেশ্যেই ডাক্তার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি অশ্বত্থামা নাকি?’ তারপরের ঘটনা মনে পড়লে ডাক্তার সাহেবের ভয়ে আজও শিউরে ওঠে গোটা শরীর। তিনি বলেন, যখন প্রশ্নটা করেই তিনি ঘুরে তাকিয়ে ছিলেন, তখন তিনি দেখেন রুগীটা তাঁর কেবিনে নেই আর। এমনকি জিজ্ঞেস করে জানা গেলো কেবিনের বাইরের কেউও ঐ রুগীকে বেরিয়ে যেতে দেখেনি। ডাক্তারটি আরও বলেছিলেন রুগীটার কপালের সেই ক্ষতটি দেখতে ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। ডাক্তারের কথায়, ‘তাঁর মগজ যেন কেউ মাথার ক্ষতটা দিয়ে টেনে বের করেছে!

আরেকটি ঘটনা অনুসারে মধ্যপ্রদেশের জামালপুর শহরে নর্মদা নদীর তীরে তাঁকে দেখা যায় ঘুরে বেড়াতে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে, নিজের মাথার ক্ষত ও রক্ত ক্ষরণ বন্ধের জন্য সেখানকার স্থানীয় মানুষদের কাছে সাহায্য চেয়ে থাকেন তিনি। তাঁদের মতে যারা একবার অশ্বথামাকে দেখে তাঁরা সারা জীবনের জন্য হয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। আবার অনেক যোগীদের দাবি, হিমালয়ের প্রাচীন এক শিব মন্দিরে পূজা করতে আসেন অশ্বথামা ( Ashwatthama)। প্রত্যহ সেই শিব মন্দিরের লক্ষ্য করা যায় তাজা ফুল আর লক্ষ্য করা যায় সেই শিবলিঙ্গের গায়ে লেগে রয়েছে সিঁদুর। আশে পাশে কোন জনবহুল এলাকা না থাকা সত্ত্বেও শিব মন্দির খোলা মাত্রই প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখা মেলে এই মন্দিরে। এই সমস্ত ঘটনা সত্যিই বিশ্বাস করতে বাধ্য করে হয়তো আজও ভারতের কোনও অজানা স্থানে জীবিত রয়েছে অশ্বথামা।




Back to top button