Guru Nanak- কে ছিলেন গুরু নানক, জেনে নিন শিখ ধর্মগুরুর কিছু অপার কীর্তি সম্পর্কে
গোড়ার কথা
পৃথিবীতে যখনই দুর্বলের ওপর সবলের আশ্রয় মাত্রা ছাড়িয়েছে, তখনই দুর্বলকে আশ্রয় দিতে জন্ম নিয়েছে নতুন ধর্ম(new religion)। অথচ পরবর্তীতে দুই ধর্মের মধ্যেও দেখা গিয়েছে রেষারেষি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লক্ষ্যে। যে মানুষ দুই ধর্মের বিভেদ(different religions)সরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মানবতার(humanity) তাকেই প্রকৃত গুরু হিসেবে মেনে নেন সকলে ধর্ম নির্বিশেষে।
গুরু নানকের আবির্ভাব
চোদ্দ শতকের শুরুর দিকে ভারতবর্ষে তীব্র মাথাচাড়া দেয় ধর্মীয় বিদ্বেষ(religious unrest)। অথচ তার কয়েকবছর আগেই ভারতবর্ষে মুসলিম সুফিবাদ এবং ভক্তিবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিল সাধারণ মানুষ। তবু ১৩৯৮ সালে তৈমুর লঙ এর আক্রমণের পর রাজা এবং প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। সেই সঙ্গে ধর্মীয় পীড়ন তীব্রতর হয়। ঠিক এই সময়ে ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের মধ্যে যে শূন্যতা তৈরী হয়েছিল তা পূরণ করতেই ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব হল শিখ ধর্মের(sikh religion)প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের।
গুরু নানকের বাল্যকাল
১৪৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল অধুনা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের রাই ভো দি তালওয়ান্দি নামক স্থানে জন্ম হয় নানকের। পিতা ছিলেন গ্রামের কোষাধ্যক্ষ। ছোটবেলা থেকেই হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের শিক্ষাই একইসঙ্গে গ্রহণ করেন নানক। ছোট থেকেই বুদ্ধিমান নানক প্রশ্ন তোলেন জীবনের অর্থ ও সারবত্তা বিষয়ে। পাশাপাশি নির্জনে ধ্যান এবং পূণ্যবান মানুষদের সংসর্গ তার প্রিয় অভ্যাস ছিল ছোট থেকেই।
নানকের নতুন জীবন
বারো বছর বয়সে পিতার উদ্যোগে সুলক্ষ্মী নামে এক কন্যার সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হয় নানকের। এরপর উনিশ বছর বয়সে লক্ষ্মী দাস এবং শ্রী চাঁদ নামে দুই সন্তানও হয় তার। এরপর সুলতানপুরের মুসলিম চারণ কবি মারদানার সঙ্গে পরিচয় হয় নানকের। এখান থেকেই তার জীবনে নতুন মোড় আসে। দুজনে হয়ে ওঠেন পরম সুহৃদ এবং শহরে আয়োজন করেন স্তুতিগানের। সূর্যোদয়ের আগে স্নান করে স্তুতিগান করতেন তারা। এমনই এক ভোরে স্নানের সময়ে নানক শুনলেন দৈবনির্দেশ।
নানকের বিশ্বভ্রমণ
এরপর তিনদিন নিখোঁজ ছিলেন নানক। চতুর্থ দিন সম্পূর্ণ নতুন অবতারে ফিরলেন নানক। তিনি দান করে দিলেন তার সমস্ত সম্পদ। এবং ঘোষণা করলেন “কোন হিন্দু নেই, কোন মুসলমান নেই”। এরপর শুরু হয় নানকের বিশ্ব পরিক্রমা। প্রথম দফায় গোটা উত্তর পূর্ব ভারতের মথুরা বেনারস, বাংলা, আসাম ভ্রমণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতও ভ্রমণ সম্পূর্ণ করেন নানক। পাশাপাশি মক্কা মদিনা ও বাগদাদ পরিভ্রমণও সম্পন্ন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার চিরসঙ্গী মারদানা।
অন্ধভক্তির অসারতা
একাধিক জায়গায় গিয়ে তিনি অন্ধভক্তির বদলে প্রচার করেন মানুষে মানুষে সাম্য। একবার হরিদ্বারে তিনি দেখেন তীর্থযাত্রীদের পুর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল নিবেদন করতে। তখন নানক আরো জোরে জল ছুঁড়তে শুরু করলেন। কারণ হিসেবে বললেন খামারে জল পাঠাচ্ছেন তিনি এইভাবে। তখন তীর্থযাত্রীরা অবাক হলে তিনি বলেন মৃত পুর্বপুরুষদের থেকে খামারের দুরত্ব কম। এ ঘটনায় নিজেদের কাজের অসারতা বুঝতে পারেন তীর্থযাত্রীরা।
সাম্যের গান
নিজের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ধর্মে ধর্মে অসাম্য ঘোচাতে নিরলস চেষ্টা করে গেছেন গুরু নানক। তার মৃত্যুশয্যায় হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ তৈরী হল দাহ করা হবে নাকি কবর দেওয়া হবে এই নিয়ে। নানক নিজেই বাতলে দিলেন সমাধান, তিনি হিন্দুদের বললেন ডানপাশে ফুল রাখতে এবং মুসলিমদের বামপাশে। সকালে প্রার্থনা শেষে যার ফুল তাজা থাকবে সেই মতেই শেষ কাজ সম্পন্ন হবে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল দুদিকের ফুলই রয়েছে সতেজ। লঙ্গরের(langar) খাবার প্রচলন তিনিই করেছিলেন সমস্ত ধর্মের ও বর্ণের মানুষের ভেদাভেদ ঘোচাতে।
একেশ্বরবাদী গুরু নানক
গুরু নানকের শিখ ধর্মের মূল ভিত্তি ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ হলেও নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের কাছে তার সাম্যনীতি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। গুরু নানক সন্ন্যাসের পথকে কখনোই বেছে নিতে চাননি, বরং চিরকাল জনগণের মধ্যেই একাত্ম হয়ে থাকার কথা বলেছেন। একেশ্বরবাদী হবার ফলে ঈশ্বরের অবতারত্বকে অস্বীকার করতেন তিনি। সেই কারণেই তিনি নিজেও ঈশ্বর নন, বরং গুরু হয়ে উঠতে পেরেছিলেন সহজ সরল মানুষের কাছে।