Khudiram Birth Anniversary- ক্ষুদিরামের জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস

১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর নামে একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভারতীয় বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। যে সকল তরুণরা খুব কম বয়সে দেশকে ভালবেসে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন, এমনকি আত্মবলিদান দিতেও পিছ-পা হননি, এমনই এক জ্বলন্ত উদাহরণ হল ক্ষুদিরাম বসু (Khudiram Basu)। খুব অল্প বয়সেই দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি নিজেকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জড়িয়ে নিয়েছিলেন। ১৯০০ শতকের গোড়ার দিকে যখন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ (Sri Arvind Ghosh) এবং ভগিনী নিবেদিতা (Sister Nivedita) মেদিনীপুরের একাধিক অঞ্চলে বক্তব্য (Speech) রাখতেন, সেই সময় তাদের দেওয়া একাধিক বক্তৃতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ছোট্ট ক্ষুদিরাম।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় ক্ষুদিরাম সক্রিয়ভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি একটি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেছিলেন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। বিভিন্ন মিছিল, স্বদেশী গান প্রভৃতির মাধ্যমে তিনি ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিলেন। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ না হতে পারায় পড়াশোনা ছেড়ে দেয় ক্ষুদিরাম। এর পরেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে আরম্ভ করেন। স্কুল ছাড়ার পরেই ক্ষুদিরাম বিপ্লবী পার্টির সদস্য হন এবং ‘বন্দেমাতরম’ প্রচারপত্র বিতরণে সক্রিয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অত্যন্ত আগ্রহ ও দক্ষতার সঙ্গে শেখার কারণে এক বছরের মধ্যেই তিনি বোমা প্রস্তুত এবং রোপণ করতে শিখেছিলেন। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তিনি বিভিন্ন থানা ও রেলস্টেশনের সামনে বোমাগুলি রোপণও করতে পারতেন। ১৯০৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলার নারায়ণগড় রেলওয়ে স্টেশনে বোমা বিস্ফোরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু।
আরও পড়ুন- ফের একবার সেরার মুকুট বাংলার মাথায়, বিরল গবেষণায় জাতীয় খেতাব পেলেন কল্যাণীর অধ্যাপক
১৯০৮ সাল ছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিপ্লবী প্রফুল্ল চন্দ্র চাকির সাথে মুজাফফরপুরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরামবসুর ওপরে। মুজাফফরপুরে আসার আগে কিংসফোর্ড বাংলার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বিপ্লবীদের উপর তার নির্মম আক্রমণ তাঁকে এই তরুণ জাতীয়তাবাদী দলের নজরে এনে দিয়েছিল। বিপ্লবীরা তাঁর ওপর এতটাই ক্রোধাণ্বিত হয়ে পড়েছিল যে তারা তাঁর উপর বোমা নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেছিল।
প্রফুল্ল চাকি ও ক্ষুদিরাম বসু দু’জনেই বিহারের মুজাফফরপুর জেলায় পৌঁছে এবং সুযোগ বুঝে কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা ছুঁড়ে মারে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, কিংসফোর্ড তখন সেই গাড়িতে ছিলেন না এবং বিপ্লবী দলের প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হয়ে যায়। এই গাড়িতে প্রিঙ্গল কেনেডি নামে আরেক ব্রিটিশ অফিসারের স্ত্রী ও মেয়ে ছিল, যিনি বোমা হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ার আগেই সম্মান ও দলকে বাঁচাতে প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করলেও ক্ষিপ্ত ব্রিটিশদের থেকে পালানো সম্ভব হয়নি ক্ষুদিরাম বসুর পক্ষে। কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা হামলার পর ব্রিটিশ পুলিশ ক্ষুদিরাম বসুকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করতে শুরু করে। তাকে গ্রেফতারও করা হয়।
আরও পড়ুন- টুইটার থেকে অ্যাডোব, বিশ্বের সেরা ১০ প্রযুক্তি সংস্থায় রয়েছে ভারতীয় মস্তিষ্ক
১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট মুজাফফরপুর জেলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ইতিহাসের পাতা এবং অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ক্ষুদিরাম যখন শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন এমন একজন শহীদ যিনি নির্ভীক সিংহের মতো তার দেশের প্রতি ভালোবাসার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। হাতে ভগবদ্গীতা নিয়ে ফাঁসির মঞ্চের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন ১৮ বছরের এই তরুণ শহীদ।