আদিবাসী কুঁড়েঘর ব্ল‍্যাকবোর্ড, রাস্তাই ক্লাসরুম, লকডাউনে শিক্ষার আলো জ্বালাচ্ছেন ‘রাস্তার মাস্টার’

দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। আর শিক্ষার আলোই দূর করতে পারে মনের অন্ধকার। তবে করোনা গত দুবছরে চারপাশে নিভিয়ে দিয়েছে অনেক আলো। মার্চ মাসে দেশজোড়া লকডাউনের সময় থেকেই পাল্টে গেছে চারপাশের বহু চেনা ছবি। করোনার বিশাল প্রভাব পড়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রেও। গত এক বছরের ওপর স্কুল কলেজ সমস্ত বন্ধ। পড়াশোনা চলছে অনলাইন ক্লাসের মাধ‍্যমে। কিন্তু অনলাইন পড়াশোনার জন্য যে জিনিসদুটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট কানেকশন কি আদৌ আছে সমস্ত ক্ষেত্রে?

বাস্তব বলছে ছবিটা খুব একটা সুখকর নয়। অনলাইন শিক্ষার পরিসেবা গ্রহণ করতে পারছে সারা ভারতে মাত্র ২৪ শতাংশ পরিবারের শিশু। তথ‍্যটা দুঃখজনক হলেও অস্বাভাবিক নয়। যে দেশে মিড ডে মিল অর্থাৎ দুপুরের খাবার শিশুদের স্কুলে আনার অন‍্যতম উপায় সেখানে অধিকাংশ পরিবারই যে দারিদ্র‍্যসীমার নীচে বসবাস করে এটাই বাস্তব। সুতরাং মোবাইল কেনা বা ইন্টারনেট প‍্যাক ভরানো এক প্রকার বিলাসিতাই বটে।

রাস্তার মাস্টার,লকডাউনে বেহাল পড়াশোনা,অনলাইন ক্লাস,শিক্ষার আলো,Rastar master,lockdown,online class,education system

 

তবে আকালেও স্বপ্ন দেখতে পারেন কিছু মানুষ, তাইতো জন্ম হয় রূপকথার। এমনই এক রূপকথার নায়ক দীপ নারায়ন নায়ক। জামুরিয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের এই শিক্ষক লকডাউনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ নেমে আসতে দেননি। স্কুল বন্ধ হয়ে গেলেও রাস্তার পাশেই ক্লাসরুম বানিয়ে পড়িয়েছেন শিক্ষার্থীদের। ব্ল‍্যাকবোর্ড হিসেবে ব‍্যবহার হয়েছে আদিবাসী কুঁড়েঘরগুলি।

রাস্তায় পড়ানোর ফলে দীপ নারায়নের নামই হয়ে গেছে রাস্তার মাস্টার। লকডাউনের ফলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দারিদ্র‍্যসীমার নিচে থাকা পরিবারের শিশুগুলির পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হতেই বসেছিল। ঠিক সেই সময়েই অভিনব পরিকল্পনা করেন দীপ নারায়ন। স্কুলবাড়ির পরিবর্তে গোটা তিলকা মাঝি আদিবাসী পাড়াটিকেই বানিয়ে ফেলেন শিক্ষাঙ্গন। আর এই কাজে তার পাশে এসে দাঁড়ান গ্রামের সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অধিবাসী। সকলের সম্মিলিত উদ‍্যোগেই গ্রামের বাড়িগুলিতে আঁকা হয় বর্ণমালা, সংখ্যা।

রাস্তার মাস্টার,লকডাউনে বেহাল পড়াশোনা,অনলাইন ক্লাস,শিক্ষার আলো,Rastar master,lockdown,online class,education system

শুধু শিশুদেরই নয়, আদিবাসী গ্রামের প্রতিটি ঘরের বয়স্ক মানুষদের মধ‍্যেও শিক্ষার দীপ জ্বেলে দিচ্ছেন দীপ নারায়ন। এই উদ‍্যোগ শুরু হয় গত বছর পাঁচই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন। “শূন্য থেকে শুরু” কর্মসূচি দিয়েই তিনি শুধু করেন দুয়ারে শিক্ষার বিস্তার। দুয়ারে শিক্ষার পাঠশালায় কুসংস্কার দুরীকরণেরও প্রচেষ্টা করেন দীপ নারায়ন। সব বয়সের মানুষদের সেখানে ছিল প্রবেশ অবাধ। সেখানে আনা হয় মাইক্রোস্কোপ। অধিবাসীদের দেখানো হয় ম‍্যালেরিয়ার জীবাণু। শিক্ষা শেষে তারা বোঝেন যে ম‍্যালেরিয়ার জন‍্য চিকিৎসা প্রয়োজন, কুসংস্কার নয়। এইভাবেই রামমোহন বিদ‍্যাসাগরের দেখানো পথেই ‘রাস্তার মাস্টার’ একাই মনের আলো জ্বালানোর ধ‍্যানে ব্রতী হয়েছেন।




Back to top button