গ্লাসে গ্লাস ঠেকিয়ে “চিয়ার্স” বলে শুরু হয় মদ্যপান, মজার এই অভ্যাসে জড়িয়ে আছে লম্বা ইতিহাস!
একা একা মদ্যপান খুব কম মানুষই করে। বেশি সময় দেখা যায় একসঙ্গে বসে মদ্যপান করছে। একাধিক লোক একসঙ্গে মদ্যপান করতে বসলে পান করার আগে তারা পরস্পরে সুরা পাত্র একসঙ্গে ঠেকিয়ে “চিয়ার্স” বলে, তারপরে মদ্যপান করে। কিন্তু এমনটা কেন হয়? অনেকেরই ধারণা এটা আনন্দ বা ভদ্রতা দেখানোর জন্য করে থাকে। কিন্তু আসল কারণটা একেবারে উল্টো। গ্লাসে গ্লাস ঠেকানোর রীতি আসলে “প্রাণে বাঁচার” উদ্দেশ্য। অবাক হলেন তো? তাহলে আসল ইতিহাসটা কি? সেটাই জানাবো আপনাদের।
বহুকাল আগে যখন সারা বিশ্বে রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক রাজা অন্য রাজাকে আমন্ত্রণ করতেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আমন্ত্রণ গুলো ছিল আসলে “ফাঁদ”। মানে, কোন রাজার অন্য রাজ্যের রাজার প্রতি রাগ থাকলে, মদের আসরে মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ওই রাজাকে মেরে ফেলত। আমন্ত্রিত রাজার সূরা পাত্রে অনেক সময় বিষ মিশিয়ে দেওয়া হত। এই ভাবেই বিষাক্ত মদ পান করে বহু রাজার মৃত্যু হয়েছে।
এই আশঙ্কার হাত থেকে বাঁচতে মদ্যপান করার আগে গ্লাস ঠেকিয়ে নেওয়ার প্রথা শুরু হয়। ভাবছেন গ্লাস ঠেকিয়ে আর কি হবে? মদে বিষ থাকলেতো তা আর ভ্যানিশ হয়ে যাবে না ঠিকই! কিন্তু আজকের মত ‘সফিস্টিকেটেড’ ভাবে আলতো করে তখন গ্লাস বা সুরাপাত্র ঠেকানো হত না। বেশ জোরের সঙ্গে একে অপরের সুরাপাত্রে ধাক্কা মারতেন, যাতে প্রত্যেকের পাত্রের তরলই অন্যদের পাত্রের তরলের সঙ্গে খানিকটা মিশে যায় (চলকে পড়ে)।
যার ফলে কেউ বিষ মিশিয়ে থাকলে সে নিজে কিছুতেই ওই বিষাক্ত মদ তখন পান করতে চাইবেন না। এর থেকেই বাকিরা বুঝতে পারবেন ‘দুধ কা দুধ পানি কা পানি’ থুরি ‘মদ কা মদ বিষ কা বিষ’। এত গেল ইতিহাসের কথা। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আলাদা কথাই বলছেন। তাদের দাবি, পান করার আনন্দ প্রকাশ করতে গ্লাসে-গ্লাসে ঠোকাঠুকি স্বাভাবিক এক শব্দ তৈরি করে। অ্যালকোহল, বিশেষত ওয়াইন তখনই সব থেকে বেশি উপভোগ করা যায়, যখন সব ক’টা অনুভূতি এক সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
“চিয়ার্স” বলার সঙ্গে সঙ্গে যে শব্দ তৈরি হয় তা জাগিয়ে তোলে শব্দানুভূতি, ছলকে পড়া পানীয় থেকে আসা গন্ধ আসে নাকে, ফেনা থেকে জন্ম নেওয়া বুদবুদ দেখে চোখ তৃপ্তি পায়। সেই পানীয় যখন মুখের মধ্যে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে, জিভ তার স্বাদ নেয়। অর্থাৎ আস্তে আস্তে পান করার সঙ্গেই জেগে ওঠে সব ক’টা অনুভূতি! এই সমস্ত কারণেই মদ্যপান হয়ে ওঠে উপভোগ্য। তাই জটিল রাজনীতি দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রথা আজও সমানতালে জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। আজও তাই মদ্যপানের আগে “চিয়ার্স” বলে তা উপভোগ করতে চায় মানুষ।