জঙ্গিস্তান আফগানিস্তানের শুভ্ররূপকে এখনও মনে করাচ্ছে ‘আফগানি স্নো’
সালটা ১৯১৯। ভারতে তৈরি এক প্রসাধনী ক্রিম হাতে পেয়ে আফগানিস্তানের রাজারও নাকি নিজের দেশের শুভ্র তুষারের কথা মনে পড়ে যায় হঠাৎ, সেই থেকে এই ক্রিমের নাম আফগান স্নো! “ভারতের প্রথম সাজগোজের ক্রিম আমরাই, এটি একটি মাল্টিপারপাস ভ্যানিশিং ক্রিম”, মুম্বই থেকে জানান আফগান স্নো সংস্থার ম্যানেজার আশরফ দালাল। বিশ শতকের গোড়ায় রাজস্থানের তরুণ ইব্রাহিম সুলতানালি পাটানওয়ালার উদ্ভাবনী ক্ষমতার ফল এই ক্রিম।
ইব্রাহিমের প্রপৌত্র সামির পাটানওয়ালার বক্তব্য, “আমাদের আফগান স্নো গাঁধীজির আশীর্বাদ প্রাপ্ত।” জানা যায়, পিকেটিংয়ের সময়েও ‘আফগান স্নো’-কে নাকি ছাড় দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। বিলিতি প্রসাধনীর মতোই গুণগত মান হলেও আফগান স্নো তখন মুম্বইয়ের কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে।
ভারতবর্ষের বিজ্ঞাপনে শুরু থেকেই নারীর স্নিগ্ধতাকে তুলে ধরা হয়েছে তার প্রধান ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে। স্বাধীন দেশে ভারতসুন্দরী প্রতিযোগিতার ‘স্পনসর’ এই আফগান ক্রিম। আশির দশকে আফগান স্নোর মডেল হিসেবে উঠে আসছেন পদ্মিনী কোলাপুরী, পুনম ঢিলোঁর মতো বলিউড সুন্দরীরা। মোট কথা এই যে, ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে ‘আফগান’ নামটি কখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আশরফ সাহেবের মতে, “আমাদের সংস্থার সাবানের নামেও ‘আফগান’ থাকত। সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে এই আফগান ছোঁয়াচটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন আফগান বললে সবাই জঙ্গি ভাবে। তাই প্রসাধনীর নাম থেকে আফগান শব্দটাই সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি!”
যদিও ‘আফগান স্নো’র সুরভিত ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আফগান শব্দটি অপরিহার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্য যুগ ও আধুনিক ভারতীয় ইতিহাসের অধ্যাপক অমিত দে জানান, “এই সব নাম ই আসলে ভারতীয়দের মনে আফগানিস্তানের সমাদরের অবশেষ। ইতিহাসের নানা পর্বে দিল্লির শাসক এবং আক্রমণকারী হিসেবে উঠে এসেছে আফগানদের নাম। ফলত বীরত্ব ও ন্যায়ের শাসক হিসেবেও পরিচিত তাঁদের নাম।” অমিতবাবুর আরও বক্তব্য, “দিল্লির লোদি বংশ বা শাসক শের শাহ কিন্তু আফগান। ন্যায়পরায়ণ হিসেবে খ্যাতনামা ছিলেন শের শাহ। এই যে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ার প্রবাদ, তাও কিন্তু চালু হয় শের শাহের আমলে।”
অমিতবাবুর সহ অন্যান্য ঐতিহাসিকের মত মোটামুটি একই যে, “ আফগানিস্তানে তালিবান উত্থান ঘটেছে ঠিকই, তবে এর জন্য সকল আফগানকে একই চোখে দেখা উচিৎ নয়।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজকের দিনে গোটা ভারতেই দেশি-বিদেশি নানা প্রসাধনী সংস্থার রমরমা। তবুও যুদ্ধসঙ্কুল রক্তাক্ত আফগানভূমির শ্বেতশুভ্র রূপ যেন ফুটে উঠছে শতাব্দীপ্রাচীন আফগানি স্নোর মাধ্যমে।
Tags: